অনলাইন ইনকামের সবচেয়ে সহজ উপায় ডিজিটাল মার্কেটিং। স্বাবলম্বী হোন ডিজিটাল মার্কেটিং করে।

বর্তমানে পৃথিবী হয়ে উঠেছে এক প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব, যেখানে প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব। এখন থেকে ১০০ বছর আগেও যা ছিল মানুষের নিকট কল্পনাতীত, তাই এখন বাস্তবে রূপ নিয়ে মানুষের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবকিছুর সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত বিশ্ব এখন অনলাইন বা ইন্টারনেট সেবার কারনে একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিনত হয়েছে। পৃথিবী চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

এর সাথে তাল মিলিয়ে ডিটিজাল মার্কেটিং হয়ে উঠেছে সকলের নিকট এক নতুন সম্ভাবনার নাম। আজ আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং ও এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানবো।

প্রথমে আমাদের জানতে হবে মার্কেটিং সম্পর্কে।

পন্য বা সেবাসমূহকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার অথবা প্রসারকেই মার্কেটিং বলা হয়। পূর্বে এসকল বিজ্ঞাপন পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, লিফলেট, দেয়াল লিখন, মাইকিং ইত্যাদি মাধ্যমে প্রচার করা হত। বর্তমানে প্রযুক্তি বা টেকনোলজির উন্নয়নের কল্যানে এসকল মাধ্যমের পাশাপাশি এখন ইন্টারনেট সেবার বহুল ব্যবহার ও বহুমূখীতার দরূন অনলাইন ভিত্তিক মার্কেটিং বা ইন্টারনেট ব্যাবহারের মাধ্যমে পন্য বা সেবার প্রচার ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনলাইনে বিজ্ঞাপনের প্রচার ও প্রসারকেই বলা হয় ডিজিটাল মার্কেটিং।

ডিজিটাল মার্কেটিং ও সম্ভাবনাঃ

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের শুরুটা মূলত এভাবে হয়েছে যে, ইন্টারনেটের ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি এবং সবার হাতে হাতে ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় মানুষ সবকিছুর সম্পর্কেই ইন্টারনেট তথ্য খুজতে থাকে। তেমনি পন্য ক্রয়কারী একচুয়াল অথবা পোটেনশিয়াল কাস্টমারগন  কোন পন্য বা সেবা ক্রয় করার আগে সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে সেই পন্য বা তথ্য সম্পর্কে যাচাই বাছাই করা শুরু করল।

তখন থেকেই মার্কেটারদের মাথায় আসলো যে পন্য বা সেবার বিজ্ঞাপনগুলোকে যদি সার্চ ইঞ্জিন বা সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে যুক্ত করে দেওয়া যায় তাহলে সহজেই প্রচার এবং প্রসার হবে। এর পাশাপাশি কাস্টমাররাও সহজেই একটি পন্য খুজতে গিয়ে বা তার সম্পর্কে জানতে গিয়ে একই ক্যাটাগরির অন্যান্য পন্যগুলোও দেখতে পাবে।

এর পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একই ধরনের দুটি পন্যের মধ্যেও তূলনা করে সুবিধা অনুযায়ী সঠিক পন্য বেছে নেওয়ার সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কল্যানে।

পূর্বে মানুষকে কোন পন্য বা সেবা ক্রয় করতে হলে অথবা পন্য বা সেবা সম্পর্কে জানতে হলে দোকান বা সেবা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে যেতে হত, যা ছিল সময় সাপেক্ষ কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় সাপেক্ষ।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কল্যানে এখন আর সেই সমস্যা নেই। মানুষ সহজেই বাড়ীতে বসে কোন পন্য বা সেবা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে ঘরে বসেই সেই পন্য ক্রয় করতে পারছে।

এমনকি ঘরে বসেই পন্য হাতেও পেয়ে যাচ্ছে হোম ডেলিভারী সুবিধার কারনে। ব্যস্ত এই বিশ্বে যেখানে প্রতিটি মূহুর্ত মূল্যবান সেখানে ডিজিটাল মার্কেটিং অত্যন্ত যুগোপযোগী একটি মাধ্যম।

এর ফলে একদিকে যেমন সময় ও শ্রম সঞ্চয় হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি হচ্ছে। যা বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখছে।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন দিক ও কার্যক্রমঃ

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বেশ কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন ডিজিটাল মার্কেটিং হল-

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM)ঃ

সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে ওয়বেসাইটের বিজ্ঞাপন দিয়ে ওয়েবসাইটের ভিউ বাড়ানোর প্রক্রিয়াকেই বলা হয় সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং বা SEM। সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এক ধরনের পেইড (Paid) ডিজিটাল মার্কেটিং, কারন এখানে টাকার বিনিময়ে সার্চ ইঞ্জিনগুলো ওয়েবসাইট গুলোর বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। 

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)ঃ

সম্পূর্ন বৈধভাবে, অর্গানিক উপায়ে কোন ওয়েব সাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের অনুসন্ধান ফলাফল তালিকার প্রথমদিকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে বলা হয় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা SEO।

এটি সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিংয়ের বিপরীত, কারন SEO পদ্ধতিতে টাকা দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা লাগে না আর SEM পদ্ধতিতে টাকার বিনিময়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে হয়। এই কারনে SEM পদ্ধতিকে Paid এবং SEO পদ্ধতিকে অর্গানিক বলা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংঃ 

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সবচাইতে বড় প্লাটফর্ম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।  সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্তমানে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশী মানুষের নিয়মিত আনাগোনা রয়েছে।  আমাদের বাংলাদেশেই ৫ কোটির অধিক জনগন বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া এ্যাপস নিয়মিতভাবে যোগাযোগ ও বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়া এ্যাপস গুলোতে ফ্রি (Free) এবং পেইড (Paid) দুই উপায়েই মার্কেটিং করা যায়। 

 কন্টেন্ট রাইটিংঃ 

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইট রাখতে চায়। এর ফলে কাস্টমারগন ওয়েবসাইটে লিখিত পন্যের বর্ননা এবং বিভিন্ন ধরনের রেটিং, রিভিউ দেখে সহজেই কোন পন্য সম্পর্কে জানতে পারে। এর ফলে ঘরে বসেই বাজার মূল্য এবং বিভিন্ন প্রকার পণ্যের মধ্য তূলনা করে সহজেই ঘরে বসে পন্য ক্রয় করাও যেতে পারে। এই ওয়েব সাইট গুলোতে বিভিন্ন পন্যের বর্ননা এবং এগুলো কেন অন্যদের তুলনায় ভালো এছাড়াও পন্যের খুটিনাটি সম্পর্কে লেখাকেই বলা হয় কন্টেন্ট রাইটিং। 

ইউটিউব (Youtube) মার্কেটিংঃ

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বর্তমানে আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ইউটিউব মার্কেটিং। কারন বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন ধরনের ভিডিও, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, তথ্যমূলক ডকুমেন্টারি নিজের ইচ্ছামতো সময়ে দেখার জন্য টেলিভিশনের বদলে ইউটিউবকে বেছে নিয়েছে। সাধারনত ভিডিও জাতীয় বিজ্ঞাপনগুলোকে ইউটিউবে প্রচার করা হয়। 

এটি আবার দু'ভাগে ভাগ করা যায়। ১ঃ জনপ্রিয় ইউটউব চ্যানেলগুলোর সাথে যোগাযোগ করে পন্য বা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচার। ২ঃ গুগল এডওয়ার্ডস এর মাধ্যমে ইউটিউবে সরাসরি বিজ্ঞাপন প্রচার। 

ইমেইল (Email) মার্কেটিংঃ

এই পদ্ধতিতে মার্কেটারকে প্রথমে বিভিন্ন মানুষের ইমেইল এড্রেস সংগ্রহ করতে হয়। এরপর বয়স, লিঙ্গ, চাহিদা, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনা করে সঠিক টার্গেটেড কাস্টমারদের নিকট পন্য বা সেবার বিজ্ঞাপন ইমেইলের মাধ্যমে প্রচার করতে হয়। এর ফলে ইমেইল ব্যবহারকারী পন্য বা সেবাসেবাটি পছন্দ করলে তখন সে সেটি ক্রয় করতে আগ্রহী হয়। 

এফিলিয়েট মার্কেটিংঃ

বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পন্য বিক্রয়ের জন্য সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়োগ করে থাকে। যাদের জন্য এফিয়েট অপশন প্রদান করা হতে পারে। অর্থাৎ কেউ যদি কোন কোম্পানির পন্য বা সেবা বিক্রয় করে দিতে পারে তবে সে নির্দিষ্ট হারে কমিশন পায়। অর্থাৎ কমিশনের বিনিময়ে অন্যের পন্য বা সেবা বিক্রয় করে দেওয়ার পদ্ধতিকে এফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সুবিধাঃ

বর্তমানে প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারনে প্রায় ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সেবা ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ডিজিটাল মার্কেটিং অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে পুজির তেমন একটা প্রয়োজন পড়েনা। সল্প খরচেই, কোন কোন ক্ষেত্রে বিনা খরচেই পন্য বা সেবার প্রচার করা সম্ভব।

খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই অধিক সংখ্যক গ্রাহকের নিকট পন্য বা সেবার বিজ্ঞাপন পৌছে দেওয়া যায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। ব্যবহারকারীর সাধারন তথ্য সম্পর্কে জানা যায় বিধায় সহজেই তাদের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পন্যের বিজ্ঞাপন পৌছে দেওয়া যায়।

এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে সঠিক পন্যের বিজ্ঞাপন সহজেই টার্গেটেড কাস্টমারের নিকট পৌছানো যায়। গ্রাহকের পূর্বে অনুসন্ধানের  ফলাফলের তথ্য হাতে থাকায় সহজেই গ্রাহকের আগ্রহ সম্পর্কে জেনে সেইসকল পন্যের বিজ্ঞাপন আলাদাভাবে বাছাই করে গ্রাহকের নিকট প্রেরন করা যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে সময় ও শ্রম দুটোই ট্রাডিশন্যাল মার্কেটিংয়ের তুলনায় কম লাগেম এবং ফলাফলও আশানুরূপ হয়। এছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের আরও অসংখ্য সুবিধা রয়েছে।

সম্ভাবনাময় ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ক্যারিয়ারঃ 

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর ফলে এদেশের তরুনরা কার্যকর জনশক্তিতে রূপান্তিত হয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সহজলভ্যতার কারনে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে মাঝারি বা ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান সমূহও ডিজিটাল মার্কেটিং নির্ভর হয়ে পরেছে।

এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য নতুন কর্মক্ষেত্র যা বেকারত্ব সমস্যার নিরসনে তরুনদের নিকট এক নতুন দিগন্তের সূচনা। যেকেউ সহজেই ওপরে বর্নিত ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন সেক্টরে সহজেই দক্ষতা অর্জন করে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা, কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশী অর্থ উপার্জন করতে পারে।

এছাড়াও মানুষ চাকরীর পাশাপাশি বাড়তি উপার্জনের মাধ্যমে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানেরও উন্নতি করতে পারে। 

অর্থাৎ ধৈর্য্য ধারণ করে নিজের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে যদি ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing)  করা যায় তাহলে আর পেছনে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন পরবেনা।

মোটকথা সম্ভাবনাময় এবং বহুমূখী ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং হয়ে উঠতে পারে তরুনদের প্রথম ও প্রধান পছন্দ যা প্রযুক্তি নির্ভর এই আধুনিক বিশ্বে একেবারেই যুগোপযোগী।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ