পড়া মনে রাখার অব্যর্থ কৌশল

আসসালামুআলাইকুম বন্ধুরা ৷ ছাত্রজীবনেই হোক কিংবা চাকুরীর জন্য যুদ্ধকালেই হোক আমরা প্রায় সবাই একটি সাধারণ সমস্যা নিয়ে ভুক্তভোগী আর তা হলো আমরা যা পড়ছি সেটা মনে রাখতে না পারা ৷ সৃষ্টিজগতে প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কারন হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কের অসাধারণ ক্ষমতা, সেটা তথ্য যাচাই করে সিদ্ধান্ত দেয়ার বেলায় এবং তথ্য সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রেও ৷ কিন্তু মহাজাগতিক সকল কিছুর মতই আমাদের ব্রেইনেরও কিছু প্রকৃতিগত বিষয় আছে যেগুলো মেনে একে ব্যবহার করলে আমরা সর্বোচ্চ ফলাফল লাভ করতে পারি ৷ আজকের লেখায় আমি এমনই কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আমাদের ব্রেইনের তথ্য সংরক্ষণ করতে অর্থাৎ পড়া মনে রাখতে সহায়ক হবে ৷ তো চলুন দেখে নেয়া যাক –

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

 

১৷ একই জিনিস কয়েকবার পড়া তবে মাঝখানে বিরতি আবশ্যক:

আমরা অনেকেই নিজেকে সুপারম্যান ভাবি এবং মনে করি যে একটি রচনা বা একটি সারাংশ বা বেশ কিছু অবজেকটিভ প্রশ্নোত্তর আমরা একবার বসেই মুখস্থ করে ফেলবো যেটা আজীবন মাথায় থাকবে ৷ সত্যি বলতে আমাদের ব্রেইন কোনো স্ক্যান মেশিন নয় যে সেটা একবারেই সব তথ্য নিয়ে নিতে পারবে ৷ আমাদের ব্রেইন কাজ করে মাংসপেশীর ন্যায় ৷ বডিবিল্ডার হতে যেমন একজন মানুষের দীর্ঘদিন লেগে থাকতে হয়, প্রতিদিন একটু একটু করে ব্যায়াম করতে হয় ঠিক তেমনি আমাদের মস্তিষ্কে তথ্যসমূহের স্থায়ী সংরক্ষণও ধীরে ধীরে হয় ৷ এইজন্য একটি টপিক একটানা বেশীক্ষণ না পড়ে সেটি বিরতি দিয়ে একই দিনে কয়েকবার অথবা পর পর কয়েকদিন রিভিশন করলে একসময় তা স্থায়ীভাবে মাথায় গেঁথে যাবে ৷

 

২৷ বিষয় পরিবর্তন করে পড়া:

একটি বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকলে সেটাতে একঘেঁয়েমি চলে এসে বিরক্তির সৃষ্টি হয় ৷ তখন আমাদের শরীরে কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরিত হয় যা “স্ট্রেস হরমোন” নামে পরিচিত ৷ এটি শরীর ও মস্তিষ্ক উভয়ের উপরই বিরূপ প্রভাব ফেলে ৷ তখন স্বাভাবিকভাবেই মনোযোগ কমে যায় এবং পড়া মনে থাকবে না ৷ তাই এক-দেড় ঘন্টা পর টপিকস বা বিষয় পরিবর্তন করে পড়া উচিত ৷ তাহলে আমরা ১ নং পয়েন্টে উল্লিখিত বিরতিও পেলাম কিন্তু বিশ্রাম না নিয়েই ৷ অর্থাৎ বিষয় পরিবর্তন করে পড়লে আমরা আগে পড়া জিনিসটার জন্য বিরতি পাচ্ছি কিন্তু এই সময়টা আমরা অবসরে না থেকে অন্য টপিক পড়ার কাজে ব্যয় করলেও সেটা স্থায়ী স্মৃতি তৈরীতে ব্যাঘাত ঘটাবে না ৷ এভাবে একদিনে ২-৩ টি বিষয় অদল বদল করে কয়েকবার করে পড়লে সেটা অনেক বেশী মনে থাকবে ৷

 

৩৷ কবিতা বা ছন্দ ব্যবহার করা:

একটা ভাবসম্প্রসারণ মনে রাখতে যতটা পরিশ্রম করতে হয় একটি সুন্দর গানের কথা মনে রাখতে তার বিন্দুমাত্রও পরিশ্রম করতে হয় না ৷ কয়েকবার শুনলে এমনিতেই মুখস্থ হয়ে যায় ৷ ঠিক তেমনিভাবে যদি কিছু অগোছালো তথ্যকে ছন্দ দিয়ে বা মজার কোনো উক্তি দিয়ে মনে রাখা যায় তাহলে সেটা মনে রাখার জন্য পরিশ্রম করতে হবে না ৷ যেমন ধরুন রাজশাহী বিভাগে ৮ টি জেলা আছে ৷ সেগুলো মনে রাখার জন্য এই লাইন মনে রাখুন, “চাপাবাজ নাসির”

Points to remember

এইবার দেখুন, ভুলে যাবার জন্য পরিশ্রম করতে হবে মনে রাখতে নয় ।

 

৪। খুঁটিনাটি বিষয় হাইলাইট করাঃ

কখনো কখনো খুব বোকা বোকা জিনিসে আমরা ভুল করে ফেলি । এগুলো খুব সূক্ষ্ম ব্যাপারে বেশী হয় । যেমন ধরুন “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়” নামটির ধ এর পরে য-ফলা এর কথা মনে থাকলেও দ এর পরে বেশীরভাগ লোকই য-ফলা না দিয়েই লিখে থাকেন কারন তারা এটা ভুলে যান ৷ এইরকম সূক্ষ্ম বিষয়ের ক্ষেত্রে আমরা ঠিক যেখানে ভুলটা করি সেই জায়গা বইয়ে কালার পেন দিয়ে মার্ক করে রাখা বা আলাদা কাগজে একটু ভিন্নভাবে লিখে রাখলে আর সেটা কয়েকবার দেখলে আর ভুল হবার কথা নয় ৷ যেমন নিচের ছবিতে আমি দ এর পরে য-ফলা খুব বড় করে লিখেছি যেন সেটা আলাদাভাবে চোখে পড়ে ৷ এভাবে খুঁটিনাটি বিষয় যেগুলোতে ভুল বেশী হয় সেগুলো হাইলাইট করে রাখলে ভালো মনে থাকবে ৷ 

Manik Byondopaddhay

৫৷ মিল আছে এমন একাধিক বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনঃ

আমাদের ব্রেইনের একটা খারাপ দিক হলো এটা খুব কাছাকাছি তথ্য পেলে সেগুলোকে মিক্স করে ফেলতে চায় যাতে করে প্রতিটি আলাদা আলাদা তথ্য তার স্বতন্ত্রতা হারিয়ে ফেলে ৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বানান শুদ্ধির কথা ৷ আজকাল বিসিএস সহ যেকোন চাকুরীর পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন খুব বেশী হয় কারন লোকজন ভুলটাকেই সঠিক ভেবে দাগায় আর নেগেটিভ মার্কিং খায় ৷ আপনি যখন প্রশ্নব্যাংক খুলেন তখন একটি প্রশ্নে চারটি অপশন দেখেন ৷ যেমন – নিচের কোন বানানটি শুদ্ধ ?

                                  ক) নিশিথিনী            খ) নিশিথীনী            গ) নিশীথিনী            ঘ) নিশীথীনি 

চারটি অপশন দেখার পর আপনি নিচে উত্তরমালা দেখে সঠিক উত্তরটি পড়বেন ঠিকই কিন্তু বিশ্বাস করুন এই প্রশ্নটিই পরীক্ষায় আসলে আপনি ভুল দাগানোর সম্ভাবনা ৯০% ৷ কেন জানেন? কারন আপনি বই থেকে চারটি অপশন দেখেছেন যারা খুব কাছাকাছি ছিলো ফলে তারা একে অপরের সাথে মিশে গিয়ে ধাঁধাঁর সৃষ্টি করবে ৷

তো এমন অবস্থায় আপনার কি করণীয়? সেটা হলো বইয়ের শুদ্ধ উত্তরটি ছাড়া বাকি তিনটি অপশন খুব ভালোভাবে কলম দিয়ে কেটে দিন যেন তাকালেও বোঝা না যায় যে দাগের নিচে কি লেখা ছিল ৷ এতে করে শুধুমাত্র শুদ্ধ উত্তরটির দিকেই আপনার দৃষ্টি পড়বে ফলে পরীক্ষায় ঐ অপশনটি আপনি সহজেই ধরে ফেলবেন । যাই হোক উপরের সঠিক উত্তর হচ্ছে “(গ) নিশীথিনী” ৷ কোনো পরীক্ষায় এটা আসলে আমার কথা একবার স্মরণ করতে ভুলবেন না যেন ৷

 

আজকের মত এখানেই শেষ করছি ৷ আপনাদের উপকার হলেই আমার লেখা সার্থক ৷ সকলের মেধার বিকাশ ঘটুক ও ভবিষ্যত সুন্দর হোক এই কামনায় আল্লাহ হাফেজ ৷

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

লেখক সম্পর্কেঃ