ইন্টারনেট মানুষের জীবনে অনেক প্রভাব ফেলেছে। মানুষ এখন অনলাইন অর্থ আয়ের জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করছে। অনলাইনে আয়ের নানা পথও তৈরী হয়েছে। তবে অনলাইনে কাজ করে আয় করতে গেলে আপনি কোন প্ল্যাটফর্মটি ধরে এগোচ্ছেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অনালাইনে নানা সুযোগ থাকলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণার মুখে পড়তে হয়। অনলাইনে কাজ করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ান সুযোগ নেই।
সময়ের সাথে মানুষের আয়ের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমান সময়ের মানুষ অনালাইনে আয় করে চলছে হাজার হাজার টাকা। বর্তমান সময় হয়ে ওঠেছে প্রযুক্তি নির্ভর, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ এগিয়ে চলছে। আজ থেকে ৫০ বা ১০০ বছর আগে আমরা অনলাইনে ইনকামের বিষয়ে চিন্তা করতে পারতাম না।
কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আজ তা সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আপনাকে অবশ্যই আয়ের পথের সাথে সম্পর্ক রেখে নিজেকে তৈরী করতে হবে। আপনি যত তাড়াতাড়ি নিজেকে তৈরী করতে পারবেন তত তাড়াতাড়ি আপনি সময়ের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারবেন।
মানুষ এই অনলাইন থেকে আয় করে চলছে কোটি কোটি টাকা। আবার কেউ কোনো ইনকামি করতে পারছে না।
অনালাইনে আয় করতে চাওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জেনে রাখা ভালো তা নিচে আলোচনা করা হল:
১. আপনি খুব তাড়াতাড়ি অনলাইনে আয় করতে চাইলে আমি বলব এই পথটি আপনার জন্য নয়। কারন, অনালইনে আয় করতে হলে সময় ও অর্থ দুইটির দরকার হয়। আপনি যদি মনে করেন, একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ক্রয় করে ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার দুই কি এক দিনের মধ্যে আয় করতে পারবেন, তবে আপনার জন্য আমার ব্যক্তিগত উপদেশ হচ্ছে, অনলাইন আয় থেকে কথাটা নিয়ে চিন্তা করাটা আপনার জন্য ঠিক হবে না।
২. আমরা অনেকেই মনে করি অনলাইনে আয় করতে চাইলে একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ হলেই হয়। এই বিষয় টা সঠিক নয়, আপনি অনলাইন থেকে আয় করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই আপনাকে টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
৩. ধৈর্য ধারন করাটা অনলাইন থেকে ইনকাম করার চাওয়ার দ্বীতিয় ধাপ। আপনার ধৈর্য ধারন ক্ষমতা থাকতে হবে, একমাত্র তবেই আপনি অনালাইন থেকে ইনকাম করতে পারবেন।
৪. আমরা দুইটি বিষয় এখন প্রায় শুনে থাকি, এক হল পরিশ্রম আর অন্যটি হল কৌশল পরিশ্রম। এই দু্ই পরিশ্রমের মধ্যে অনেক পার্থ্যক্য আছে। এখন আপনাকে চিন্তা করতে হবে আপনি কোন ধরনের পারিশ্রম করবেন।
৫. আমি বিভিন্ন ধরনের অনালাইন আয়ের সেমিনার অংশগ্রহন করার সময়, প্রায় একটি সমস্যার সামনে পড়ি, আর তা হল কতদিনের মধ্যে আমার আয় শুরু হবে। আমি এই প্রশ্নের উত্তরে একটাই কথা বলব, আপনি যত তাড়াতাড়ি আপনার কাজকে ভালোবাসতে পারবেন তত তাড়াতাড়ি আপনি অনলাইন থেকে আয় করতে পারবেন।
অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করা যতটা সহজ ততটা কঠিন ও হতে পারে। বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আমরা অনেকেই ঘড়ে বসে প্রযুক্তির মাধ্যমে আয় করার চিন্তা করে থাকি।
অনেক ঘাটাঘাটি করেও উপায় পাই না তাই আমি বলতে চাই অনলাইনে ইনকাম করার সোর্স অনেক আছে। কিন্তু তার মধ্যে ভালো ও খারাপ আছে। আমরা আজকের এই আলোচনায় অনলাইনে আয়ের উপায় জানব যেগুলো থেকে আপনি যেমন অনেকটা নিশ্চিন্তে অনালাইনে আয় করতে পারবেন, একই রকমভাবে স্বচ্ছলভাবে আয়ও করতে পারবেন। এসব সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল:
ফ্রিলান্সিং:
অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিলান্সিং কাজ করার বিষয়টি সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্স কাজ করার সুযোগ দেয় কয়েকটি ্ওয়েবসাইট। সেখানে অ্যাকাউন্ট খুলে দক্ষতা অনুযায়ী কাজের জন্য আবেদন করতে হয়। কাজ দাতা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যোগাযোগ করে ফ্রিল্যান্সারদেরকে কাজ দেয়।
কয়েকটি ওয়েবসাইটে কাজের দক্ষতার বিবরণ জানাতে হয়, যাতে ক্রেতা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। এসব সাইটের মধ্যে ফাইভার ডটকম.আপওয়ার্ক ডটকম, ফ্রিল্যান্সার ডটকম,ও ওয়ার্কএনহায়ার ডটকমে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়া যায়। ঘন্টায় ৫ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত আয় করা যায় এসব সাইট থেকে। মনে রাখতে হবে, কাজ শেষ করার পর কাজ দাতার অনুমোদন পেলেই তবেই অর্থ ছাড় দেবে। বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ আনা যায়।
নিজের ওয়েবসাইট তৈরী:
এখন নিজের ওয়েবসাইট তৈরীর জন্য অনলাইনে অনেক এলিমেন্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে ডোমেইন নির্বাচন, টেমপ্লেট ও ওয়েব সাইট তৈরীর নকশা প্রভৃতি। যখন পাঠক বা দর্শককে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কন্টেন্ট সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়, তখন গুগোল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। গুগোলের বিঙ্গাপন যখন সাইটে দেখানো শুরু হবে, এবং তাতে কিক্ল পড়বে, তখন আয় আসতে শুরু করবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং:
এই পদ্ধতিতে আয়ের ক্ষেত্রেও নিজের ওয়েবপেজ বা ব্লক প্রয়োজন। যখন ওয়েবসাইট বা ব্লগ চালু হবে, তখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লিংক তাতে যুক্ত করতে পারবেন। যখন আপনার সাইট থেকে কোন পণ্য বা সেবা কোনো দর্শক কিনবেন, তখনই আপনার আয় আসতে শুরু করবে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন:
অনালাইনে ঘড়ে বসে আয়ের ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ডিজাইন ভালো উপায়। যারা এই কাজে দক্ষ, তারা বিভিন্ন ডিজাইন অনালাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে দিয়ে থাকেন। সেখান থেকে তাদের আয় আসে। তাদের তৈরী একটি পণ্য অনেকবার বিক্রি হয়, অর্থাৎ একটি ভালো নকশা থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত আয় হতে থাকে। অনলাইনে এধরনের অনেক ওয়েবসাইটে গ্রাফিক্সের পণ্য বিক্রি করা যায়। এছাড়াও অনালাইন মার্কেপ্লেসগুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের অনেক চাহিদা রয়েছে।
জরিপ সার্চ ও রিভিউ:
অনালাইনে জরিপ অংশ নিয়ে অর্থ আয় করতে পারেন। অনেক ওয়েবসাইট জরিপে অংশ নিলে অর্থ দেয়। এ ছাড়া অনলাইন সার্চ ও পণ্যের পর্যালোচনা লিখে আয় করতে পারেন। তবে, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংকিং তথ্য দেওয়া লাগতে পারে। তাই এক্ষেত্রে কাজ করার সময় সতর্কভাবে কাজ করতে হবে।
ভার্চ্যুয়াল সহকারী:
এখন ভার্চ্যুয়াল সহকারী কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। ঘন্টাপ্রতি আয়ও বেশি হয়। বাড়ি থেকে করপোরেট অফিসের নানা কাজ অনলাইনে করে দেবার সুবিধা আছে এখন। ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কর্মী বা নিজের ব্যবসার কাজ নিজেই চালানো যায়। বিভিন্ন দক্ষতার ভিত্তিতে ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ফোন কল, ইমেল যোগাযোগ, ইন্টারনেট রিসার্চ, ডেটা এন্ট্রি, এডিটিং, রাইটিং,ব্লগ, গ্রাফিক্স, টেক্স সাপোর্ট, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবস্থাপনার মতন কাজ থাকে।
অনুবাদ:
ইংরেজির পাশাপাশি অন্য কোনো ভাষা ভালোভাবে জানা থাকলে সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন। বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে বিভিন্ন ডকুমেন্টে অনুবাদ করে আয় করতে পারেন। যাদের স্প্যানিস, আরবি, জার্মানসহ অন্যান্য ভাষা জানা আছে, এবং এগুলো থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ বা ইংরেজী থেকে অন্যান্য ভাষাতে অনুবাদ করে ভালো আয় করতে পারবেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম:
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের জন্য নয়। এগুলো কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন। বিভন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্রান্ডের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিকল্পকদের প্রচুর অর্থ দেওয়া হয় তাদের ব্রান্ডের প্রচার করার জন্য। অনলাইনে গ্রাহক টানা প্রচার করার জন্য অবশ্য সৃজনশীলতার দরকার। বিভিন্ন পোস্ট তৈরী, ভিডিওর মাধ্যমে ফেসবুক বা অন্যান্য মাধ্যমে প্রকাশ করে তা ভাইরাল করতে পারলে ভালো অর্থ আসে।
ওয়েব জিজাইন:
এখনকার অনলাইনে কাজের ক্ষেত্রেও ওয়েব ডিজাইনের চাহিদা ব্যাপক। কোনো প্রজেক্টে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। সব ব্যবসায়ী প্রযুক্তি প্রেমী নন। নিজেদের ওয়েরসাইট তৈরীতে তাদের ওয়েব ডিজাইন দরকার পড়ে। যাঁরা ওয়েব ডিজাইনার হিসাবে কাজ করতে চান নিজেদের ওয়েব সাইট খুলে সেখান থেকে ছোট ব্যবসা দাঁড় করতে পারেন। এ ছাড়া ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনা ও হালনাগাদের জন্য ওয়েব ডিজাইনারদেরকে দরকার পড়ে। ফলে ডিজাইনারকে বসে থাকতে হয় না।
কন্টেট রাটিং:
যারা লেখালেখি ভালো এবং ভাষায় সাবলীল লিখতে পারেন, তাদের কাজের জন্য বসে থাকতে হয় না। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে কাজ করে বা লিখে বা দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। আর্টিকেল লিখার মানের উপর ভিত্তি করে আয় আসে।
ব্লগিং:
অনেকে শখ করে অনেক বিষয় লেখেন। কিন্তু শখের বিষষটি যদি পেশাগত কাজে লাগাতে পারেন. তবে অনলাইনে আয় করতে পারবেন। ব্লগিং করে আয় করার অনেক সুযোগ আছে। দুই উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করা যায়। একটি নিজের ব্লগসাইট তৈরি ওয়ার্ডপ্রেস বা টাম্বলার প্যালফর্মে বিনা মূল্যে ব্লগ শুরু করতে পারেন। আবার চাইলে নিজে ডোমেইন হোস্টিং করে ব্লগ চালু করতে পারেন।
তবে নিজের ব্লগ চালু করতে গেলে কিছু বিনিয়োগকরার দরকার হবে। ডোমেইন হোস্টিং কিনতে হবে। নিজের ব্লগ শুরু করা টাই ভালো কারন এতে নিজের প্রয়োজন অনুুযায়ী অনেক পরিবর্তন করার সুযোগ আছে। তবে ব্লগ লিখে আয় করতে গেলে রাতারাতি আয় আসবে না। এর জন্য প্রচুর সময় ও ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।
ইউটিউব:
যারা ব্লগ লিখে আয় করতে চান না, তারা ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে ভিডিও থেকে আয় করতে পারেন। এ জন্য ভালো সৃজনশীল ও ভালো সম্পাদনা জানতে হবে। নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলে নিজের ভিডিও আপলোড করে সেখান থেকে আয় করতে পারবেন। যে বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি, সেই বিষয়ে ভিডিও না রাখলে মানুষ তা দেখবেন না। ভিডিও না দেখলে আয় হবে না। বিষয়টি অনেকটা ব্লগের মতোন। তবে এক্ষেত্রে কনন্টেন হচ্ছে ভিডিও।
ডেটা এন্ট্রি:
অনালাইনে সহজ কাজগুলোর একটি হচ্ছে ডেটা এর্ট্রি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আয় খুব কম। তবে এধরনের কাজ অটোমেশনের কারনে এখন খুব কম পাওয়া যায়। যারা কম্পিউটার,ইন্টানেট, ও দ্রুত গতির টাইপিং দক্ষতা আছে তারা এই কাজ করতে পারেন। অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সিং সাইটে এধরনের কাজ রয়েছে। তবে কাজের কোনো দক্ষতা থাকে, তারা সহজে কাজ পান এবং দ্রুত আয় করেন।
You must be logged in to post a comment.