যে কাজগুলো করে আপনি অনলাইন থেকে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

আমাদের হাতের নাগালেই সব আছে। কিন্তু আমাদের কোন ধারণা নেই। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বেড়েছে মানুষের কর্মফল। আমরা অনেকেই সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে পারছি না। কত লোক বেকার বসে আছে চাকরির অভাবে হতাশায় ভুগছে, দরিদ্র জীবনযাপন করছে অথচ হাতে রয়েছে একটি স্মার্টফোন। অনেকে আবার অভাবে না থাকলেও স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ এ অনর্থক কাজে প্রচুর সময় নষ্ট করছে। যেটুকু কাজে লাগিয়ে অনায়াসে ইনকাম করা যায়।

অনলাইনে যেসব প্লাটফর্ম ও রিসোর্স এর মাধ্যমে সত্যিকারের অর্থে আয় করা যায় সেগুলো নিয়েই নিচে আলোচনা করা হলো

ফ্রিল্যান্সিং

অনলাইনে আয়ের কথা আসলে প্রথমে আসে ফ্রিল্যান্সিং। এটা অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আমাদের দেশের হাজার হাজার মানুষ ঘরে বসে আয় করছে। এটিকে আরো জনপ্রিয় করার জন্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কোর্স ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থাও আছে।

ফ্রিল্যান্সিং মূলত একটি চাকরির মতোই। বিদেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের কাজ করিয়ে নিতে বিশ্বেের বিভিন্ন দেশ থেকে লোক নিয়োগ করে থাকে। আর যাদের চাকরির প্রয়োজন তারা নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করে। এই দুই পক্ষের সংযোগ ঘটায় আপওয়ার্ক,ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার এর মত কিছু মাধ্যম। এসব মিডিয়ামে কোম্পানিগুলো কাজের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। আর চাকরি সন্ধানিরা নিজেদের সকল যোগ্যতার বিবরণ সহ এই প্লাটফর্মে একাউন্ট খোলেন।

অনেক প্রতিযোগীর ভীরে যার প্রোফাইল ও পারিশ্রমিক এর পরিমাণ কম্পানির পছন্দ হয়,কোম্পানি সেই নির্দিষ্ট কাজের জন্য তাকে নিয়োগ দেয়।যে নিয়োগ দেয় তাকে বলা হয় ক্লায়েন্ট। ক্লায়েন্ট একটা সময় বেধে দিবে আপনাকে সেটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য শেষ করে দিতে হবে। কাজটি ক্লায়েন্টের পছন্দ না হলে, তাহলে আবার সেই কাজটি করতে হতে পারে। আপনার কাজের মান অনুযায়ী ক্লায়েন্ট আপনাকে রেটিং দিবে।যা আপনাকে পরবর্তীতে আরো কাজ পেতে সাহায্য করবে। কাজটি ক্লায়েন্ট কর্তৃক অনুমোদিত হলেই আপনি পেমেন্ট পাবেন।

রাইটিং, ব্লগ রাইটিং,রিভিও রাইটিং, করিয়েটিভ রাইটিং,একাডেমিক রাইটিং,কপি রাইটিং, ডাটা এন্ট্রি,গরাফিক্স ডিজাইন,ওয়েব ডিজাইন,অনুবাদ, প্রোগ্রামিংং,কোডিং,সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টসহ আরো অনেক কিছু ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে করতে পারবেন।

গুগল অ্যাডসেন্স থেকে উপার্জন

বিশ্বের সঅবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সংস্থার একটি হচ্ছে 'গুগল অ্যাডসেন্স'। গুগল আপনার ওয়েবসাইট /ব্লগ/ইউটিউব চ্যানেল এর মান যাচাই করে অ্যাডসেন্স এর জন্য অনুমোদন দিবে কিনা তা নির্ধারন করবে। অনুমোদন পেলে আপনার ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেল গুগুল বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে। ভিজিটররা সেই বিজ্ঞাপনগুলোতে ক্লিক করলে গুগল আপনাকে টাকা দিবে। আর এই পেমেন্ট অবশ্যই ডলার ভিত্তিক হবে।

আপনার কন্টেন্ট ইউনিক ভালো মানের হলে গুগল এডসেন্সে তেমন কোন বেগ পেতে হবে না। ভালো কন্টেন্ট এর ভিজিটর ও বেশি হবে,আর বিজ্ঞাপনেএ ক্লিক ও বাড়বে। গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আপনার ব্লগ বা চ্যানেলে কি বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হবে সেটা আপনি কন্ট্রোল করতে পারবেন না। তারা তাদের ইচ্ছামতো বিজ্ঞাপন দেখাবে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মূলত ওয়েবসাইট বা ব্লগ থেকে আয়েএ একটি মাধ্যম। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি ব্লগ বা ওয়েবসাইট ছাড়াও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সুযোগ দিচ্ছে। আপনি নিজের ফেসবুক পেজ অথবা পার্সোনাল একাউন্ট দিয়েও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। পণ্য যেকোনভাবে বিক্রি করতে পারলেই আপনাকে কমিশন দিবে। এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য এখন আর দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।বাংলাদেশের বেশ কিছু কোম্পানি এখন এফিলিয়েট মার্কেটিং চালু করেছে।

ইউটিউব করে আয়

লেখালেখি যারা উৎসাহ বোধ করেন না, কিন্তু ক্যামেরা নিয়ে ক্কাজ করতে ভালোবাসেন অথবা ভিডিও সম্পাদনায় পারদর্শী তারা বেছে নিতে পারে ইউটিউবকে। ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া নিয়ে ভিডিও বানিয়ে অনেকেই লাখ টাকা ইনকাম করছে। তবে ব্লগিং এর মত এটাও মাথায় রাখতে ,কোন বিষয়ে মানুষ ভিডিও দেখতে চায়,কিংবা কি দেখালে আপনি দর্শকদের ধরে রাখতে পারবেন। সেগুলো খুজে নিয়ে তার উপর ভালো মানের ভিডিও বানাতে হবে। তাহলেই আপনার ইউটিউব চ্যানেলে দর্শক প্রিয় হবে এবং আপনি আয় শুরু করতে পারবেন। আপনার ভিডিও যদি ভালো হয় তাহলে আপনার ভিডিও হাজার মানুষ দেখবে এবং আপনার ভিউ,সাবস্ক্রাইবার বাড়বে আর আপনার আয়ের ক্ষেত্রটাও অনেক সহজ হবে।

এছড়া ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়ের উৎস হিসেবে আপনি গুগল এডসেন্স বা মানিটাইজেশন বা এফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবহার করতে পারবেন।এছাড়া আপনার চ্যানেল বড় হলে বিভিন্ন কোম্পানি আপনাকে স্পন্সরশিপ অফার করতে পারে,যেটা হতে পারে আয়ের বড় সুযোগ।

জরিপ, সার্চ, রিভিউ করে আয়

অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের জরিপ করা হয়। যেগুলোতে অংশগ্রহণ করলে টাকা দেওয়া হয়। অনলাইনে সার্চ প্রোডাক্ট রিভিউ মাধ্যমেও আপনি আয় করতে পারবেন। এসিব ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা ব্যাংক একাউন্ট অথবা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দিতে লাগতে পারে।তাই আপনাকে সতর্ক হতে হবে,কোভাবেই যেন তথ্য হ্যাক হওয়ার সুযোগ না থাকে।

কপি টাইপিং করে আয়

অনলাইনের সবচেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে কপি টাইপিং এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। কপি টাইপিং কর্মী হিসেবে আপনাকে হাতে লেখা আর্টিকেলকে দেখে টাইপ করে সম্পাদনার উপযোগী করে তুলতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নির্দিষ্ট বাজেটের পরজেক্টে কাজ করতে পারবেন অথবা ঘন্টা ভিত্তিক কাজের সুযোগ পাবেন।

ডেটা এন্ট্রি করে আয়

কপি টাইপিং এর মতই আরেকটি সহজ অনলাইজ জব হলো ডাটা এন্ট্রি। যদিও এটা সহজ কাজের আয়, ও তুলনামুলকভাবে কম হয়,তবে ছাত্রছাত্রী বা চাকরিজীবিদের পড়াশুনা ও চাকরির পাশাপাশি কিছু বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসেবে এটি অবশ্যই একটি ভালো কাজ। আপনার যদি দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনি অবশ্যই প্রতিযোগিতার মাঝে কাজ পাবেন। কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ও টাইপিং স্পীড ভালো হলে আপনি ডেটা এন্ট্রির কাজটি সহজেই করতে পারবেন।

ওয়েব ডিজাইন করে আয়

অনলাইনে ওয়েব ডিজাইন ব্যাপক চাহিদা ফেলছে। আয়ের পরিমাণও তূলনামুলকভাবে বেশি। এই প্রজেক্টে ২০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। সকল কোম্পানিরই ওয়েবসাইট থাকে। এইসব ওয়েবসাইট তারা ওয়েব ডিজাইনারের মাধ্যমে ডিজাইন করিয়ে থাকেন। ওয়েব ডিজাইনারদের কাজের অভাব হয় না। আপনি যদি ওয়াব ডিজাইনার হতে চান তাহলে আপনাকে কোডিং ও ডিজাইন দুটোতে দক্ষ হতে হবে। আপনি যদি ভালো মানের ডিজাইন করতে পারেন, তাহলে আপনার আয় ও তত বেশি হবে।

অনুবাদ করে আয়

আপনি যদি ইংরেজির পাশাপাশি অন্য ভাষগুলো জানেন তাহলে অনুবাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্ট অনুবাদ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটা থেকে আয়ের পরিমাণও কিন্তু কম নয়। ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতে খুজলেই আপনি অনুবাদের কাজ পেয়ে যাবেন।

আপনি যে পদ্ধতিতেই আয় করতে যান না কেন,তা কখনোই রাতারাতি হবে না। আপনাকে ধৈর্য্য সহকারে লেগে থাকতে হবে। আপনাকে বার বার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই আপনি পারবেন।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles