তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বর্তমানে অনলাইনে আয়ের বিষয়টি। আর ছাত্র ছাত্রীরাই এর অনেক বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছে। এই অনলাইন এ আয়েরই একটা অত্যন্ত জনপ্রিয় সেক্টর হলো লগো ডিজাইন করে আয়।
আপনি বিশ্বাস করে আর নাই করে একজন লগো ডিজাইনার মাসে শুধুমাত্র লগো ডিজাইন করে আয় করতে পারে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকা আবার অনেকেই আরও বেশি।
এ বিষয়টি কি আপনার কাছে বিশ্ময়কর লাগছে? আমরা আজকে আপনার সব সংশয় দূর করে দিব। হ্যাঁ, আজকে আলোচনা করতে চলেছি লগো ডিজাইন সমন্ধে। কিভাবে এই লগো ডিজাইন করে মাসে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করবেন তাই নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনা। তো দেরি না করে চলুন দেখে নিই আজকে আমরা কি কি জানব-
লগো ডিজাইন কি? লগো ডিজাইন এর বর্তমান অবস্থা ও চাহিদা, লগো ডিজাইন কিভাবে শুরু করবেন ?
আজকের আলোচনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকুন-
লগো ডিজাইন করে অনলাইনে আয় করার উপায় লগো ডিজাইন করে অনলাইনে আয় করার উপায়
লগো ডিজাইন কি? What is Logo Design
গ্রাফিক্স ডিজাইন এর দুনিয়ার অন্যতম একটি ক্ষেত্র হলো লগো ডিজাইন। বলতে গেলে অনেকটা জুড়েই রয়েছে লগো ডিজাইন। লগো বলতে যে জিনিসটাকে বুঝানো হয় তা হলো একটি নির্দিষ্ট চিহ্ন বা সিম্বল যা দ্বারা একটি কোম্পানি বা ব্রান্ডকে বোঝানো হয়। আপনার সুবিধার্থে চলুন একটি উদাহরণ দিয়েই বুঝিয়ে দেয়া যাক-
ধরুন আপনি অ্যাডিডাস (addidas) এর জুতা কিনবেন। এখন কেনার জন্য বাজারে গেলেন। কিন্তু আপনি কি করে বুঝবেন কোনটা অ্যাডিডাস ব্রান্ডের জুতা। নিশ্চয় অ্যাডিডাস এর সেই বিখ্যাত সাইন দেখে । কি তাই তো?
হ্যাঁ, ঠিক তাই। এই চিহ্ন বা সিম্বলটাকে মূলত লগো বলা হয়ে থাকে। যা মূলত একটি কোম্পানি বা ব্রান্ডকে প্রচার এর জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। লগো দ্বারা খুব সহজেই কোন ব্রান্ড সম্পর্কে জানা যায়। যাই হোক এই ছিল লগো সম্পর্কিত বিষয়টি।
এখন ফেরা যাক আমাদের মূল আলোচনাতে। লগো ডিজাইন মূলত লগো তৈরি করানোকেই বুঝানো হয়। এখন বোলওঁতে পারেন, তাহলে এর নাম লগো মেকিং হলো না কেন? আসলে আপনাকে একটা লগো যে শুধু বানাতেই হবে তা কিন্তু নয়।
তার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিজাইনও প্রয়োজন। আর এ দুয়ের সমন্বয়েই অর্থাৎ নিজের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে লগো বানানো ও তা ডিজাইন দ্বারাই মূলত লগো ডিজাইন ব্যাপারটিকে বুঝানো হয়।
Read More: বাংলায় লেখালেখি করে মাসে 10 থেকে 15 হাজার টাকা আয় করতে চান? এখানে দেখুন।
এ পর্যায়ে আমরা জানব লগো ডিজাইন সেক্টর এর ভবিষ্যত ও বর্তমান কার্য পরিস্থিতি সমন্ধে। চলুন তবে-
লগো ডিজাইন এর বর্তমান অবস্থা ও চাহিদা-
বর্তমান কিছু রিপোর্ট অনুসারী এ বিষয়টা জানা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে লগো ডিজাইন এর বাজার এর জন্য বরাদ্দ টাকার পরিমাণ ৩ বিলিয়ন US ডলার এর মতো। ধারণা করা হয় যে ইউ এস এর যে নতুন নতুন ব্যবসাগুলো তৈরি হচ্ছে তার মালিকেরা খুশি খুশি তাদের কোম্পানির লগো এর জন্য ৫০০ ডলার ব্যয় করতে রাজি। অর্থাৎ এই সেক্টর এর মান এবং সম্মানী উভয়ই অনেক বেশি।
তাছাড়াও লগো ডিজাইন সমন্ধে আরো একটি চমৎকার বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র এর ১৮% কোম্পানি এই লগোর জন্যই শুধু ১০০০ ডলার খরচ করতেও রাজি। যা বাংলাদেশি টাকায় দাড়াচ্ছে ৮৪ হাজার টাকা। আর এসব শুনেই লগো ডিজাইনারদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এমন সব লোভনীয় অফারগুলোও তাদেরকে এই লগো ডিজাইন এর দিকে আকৃষ্ট করছে। তাই বলছি এটি যদি আপনি নিজের ব্যক্তিগত পেশা হিসাবে ধরে নেন তবে আপনি নিমেষেই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যেতে পারবেন।
লোগো ডিজাইন কিভাবে শুরু করবেন?
লগো ডিজাইন এর এসব লোভনীয় অফার সমূহ নিশ্চয় আপনাকে এতক্ষণে আকৃষ্ট করে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে। আপনি হয়তো এখন চাচ্ছেন কিভাবে এই কাজটি করা যায় আর মাসে মাসে এত টাকা ইনকাম করা যায় তাই না?
হ্যাঁ, তা নিয়েই এখন কথা বলব কিভাবে লগো ডিজাইন শুরু করবেন। চলুন তবে আপনার শুরুর পদক্ষেপগুলো সমন্ধে জানা যাক-
লোগো ডিজাইন এর বেসিকটা শিখুন-
লগো ডিজাইন যদি শুরু করতেই চান তবে আপনাকে এক্কেবারে শুরু থেকেই শিখতে হবে। এখানে লগো ডিজাইন এর বেসিক বোলওঁতে আপনাকে লগো সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আর শুরুতেই আপনাকে জেনে নিতে হবে বিভিন্ন লগো ডিজাইনিং সফটওয়্যার এর কাজ । বর্তমানে জনপ্রিয় লগো ডিজাইন এর সফটওয়্যারগুলো হলো-
- এডোবি ফটোশপ
- এডোবি ইলাস্ট্রেটর
- কোরেল ড্র
যে সফটওয়্যারগুলোর কথা আপনাকে বললাম সেগুলো মূলত আপনার মূল হাতিয়ার। যুদ্ধে নামার আগে আপনার যে হাতিয়ার দরকার তা হলো এগুলো।
আপনাকে অবশ্যই এসব এর কাজ সমন্ধে জানতে হবে তাছাড়া নিজেকে যুদ্ধের ময়দানে একেবারেই দুর্বল মনে হবে।
আমি আপনার জন্য একটি ফেমাস টিউটোরিয়াল দিয়ে দিচ্ছি যা দ্বারা খুব অল্পদিনেই কাজ শিখতে পারবেন। তো দেখে আসুন- এডবি ইলাস্ট্রেটর টিউটোরিয়াল।
তাই যেহেতু শুরু করতেই চাচ্ছেন তা হলে শিখে ফেলতে পারেন এসব এর কাজ। এরপর এর যে জিনিসটা আপনার লাগবে তা হলো লোগো সম্পর্কে ধারণা রাখা।
একটা ভালো লোগোতে কি কি জিনিস প্রয়োজন, কেমন ডিজাইন হওয়া উচিত এসব। যা আপনি সফটওয়্যারগুলোর কাজ শেখার পর করতে পারেন।
লোগো ডিজাইন এর কনসেপ্ট, মেথড ও টেকনিক-
ফটশপ, ইলাস্ট্রেটর এর কাজ সবাই জানে কিন্তু মূল পার্থক্যটা যেখানে তৈরি হয় তা হলো কনসেপ্ট ও ডিজাইনে। অর্থাৎ কে কতটা ইউনিক বানাতে পারছে তার উপর।
ধরুন আপনি একটি কোম্পানির কাছে থেকে একটি অর্ডার নিলেন যে তাদের একটি লোগো বানিয়ে দিতে হবে অ্যাডিডাস এর লোগো এর মতো। এখন আপনি তাদের হুবহু অ্যাডিডাস এর লোগোই বানিয়ে দিলেন। এখন আপনার কি মনে হয় তারা আপনার লোগো নিবে?
মোটেও না। কেননা আপনি অন্য একজন এর লোগো কপি করেছেন। আর তাই আপনার থাকতে সৃজনশীলতা। নিজের ইউনিক লোগোর চিন্তা ভাবনা আপনাকেই করতে হবে। বেশি বেশি লোগো বানানোর মাধ্যমে আপনি বেশি ইউনিক লোগো এর চিন্তা বাড়াতে পারবেন।
আর তাই কাজ শেখার পাশাপাশি আপনাকে কনসেপ্ট অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে। সেই সাথে নিজের টেকনিক, এবং মেথডগুলোকেও সাজিয়ে নিন।
নিজের ব্রান্ড এবং পোর্টফলিও তৈরি করুন-
যে কোন মার্কেটপ্লেসেই যান না কেন আপনার কাজ পাওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে আপনার পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার উপর। আর ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দেয়ার আগে এই বিষয়টার উপরেই নির্ভর করবে।
তাই আপনাকে একটি নিজস্ব পোর্টফলিও বানিয়ে নিতে হবে। যেখানে থাকবে আপনার নিজস্ব ব্রান্ড পরিচিতি। সেই সাথে আপনার বিভিন্ন কাজের স্যাম্পল সেখানে রাখতে পারবেন। আপনাকে একটি পোর্টফলিও সম্পর্কে যে ধারণাটি দিতে পারি তা হলো-
- একটি পোর্টফলিও ওয়েবসাইট তৈরি করুন।
- নিজস্ব ফেসবুক পেইজ তৈরি করুন ।
- সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের কাজের প্রচার প্রচারণা ।
আপনি যদি যথাযথভাবে উপরের কাজগুলো করতে পারেন তাহলে কিন্তু খুব সহজেই আপনি খুব কমদিন এর মাঝেই হাজার হাজার ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে পারেন।
লোগো ডিজাইন এর কাজ কোথায় পাবেন?
কথা তো অনেক হলো, কিন্তু আসল কাজটাই যে বাকি। এত কাজ যে শিখলেই তা কোথায় অ্যাপ্লাই করবেন? কাজ খুঁজে পাবেন কোথায়?
এর উত্তরে বলতে চাই আপনার জন্য হাজার হাজার কাজ অপেক্ষা করছে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসগুলোতে। যেখানে আপনি এমন হাজারো কাজে সন্ধান নিমেষেই পেয়ে যাবেন।
উপরে একটা কথা বলে ছিলাম যে যুক্তরাষ্ট্র এর লোগো ডিজাইন এর বাজার এর বরাদ্দ টাকা প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। আর তারা এই কাজগুলো কোথায় দেয় জানেন ? বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসগুলোতে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই নিজের কাজটি খুঁজে পেতে পারবেন ।
আমি এ পর্যায়ে আপনাকে কিছু মার্কেটপ্লেস এর তালিকা দিচ্ছি যেখানে আপনি কাজ পেতে পারেন। এগুলো-
- ফাইভার
- ফ্রি ল্যান্সার ডট কম
- আপ ওয়ার্ক
এই মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনি খুব সহজেই কাজ পেয়ে যেতে পারেন। কেননা এখানে সেকেন্ডে সেকেন্ডে কাজ দেয়া হয়। আর এটা আপনার জন্য এক বিশাল সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।
দেশি মার্কেটপ্লেস ও দেশি ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজ-
আপনি যদি একজন নতুন হয়ে থাকেন তাহলে ইন্টারন্যাশল মার্কেটপ্লেসে যাওয়া আপনার জন্য কিছুটা রিস্কি হয়ে যেতে পারে।
কেননা ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে যারা কাজ করে তাদের বেশিরভাগেরই দরকার পড়ে উচ্চ অভিজ্ঞতা ও কাজের দক্ষতা। যা একজন নতুন হিসাবে আপনার নাও থাকতে পারে।
যার জন্য আমি আপনাকে সাজেস্ট করব শুরুতে দেশি ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করার। এ পর্যায়ে আমি আপনাকে কিছু দেশি মার্কেটপ্লেস এর কথা বলছি-
- কাজ কি ডট কম
- বিল ল্যান্সার
- স্বাধীনকাজ
হ্যাঁ উপরোক্ত তিনটি মার্কেটপ্লেস এখন বাংলাদেশ এর তরুণদের কাজ খুঁজে পাওয়ার এক আলাদা ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি নিয়তই এখানে অনেক দেশি ক্লায়েন্ট বিভিন্ন কাজ পোস্ট করে থাকে।
আর এখান থেকেই আপনি আপনার ক্লায়েন্ট কে খুঁজে পেতে পারেন। যেহেতু এটি দেশি মার্কেটপ্লেস তাই এখান থেকে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। আর এই মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করে আপনি আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দুটোই বাড়াতে পারবেন।
লগো ডিজাইন এর কিছু স্পেশাল টিপস এন্ড ট্রিকস-
লগো ডিজাইন এর জন্য আপনি কিছু জিনিস অনুসরণ করতে পারেন যাতে করে আপনার লগো আরো ভালো এবং সুন্দর হবে। এ কাজটির জন্য আপনাকে যে জিনিসগুলো অনুসরণ করতে হবে তা হলো-
ব্রান্ডের আইডেন্টিটি নির্ধারণ করুন- প্রথমেই আপনাকে খুঁজতে হবে যে আপনার লগোটি দ্বারা কি বোঝাতে চাচ্ছেন বা কি কাজে এটি ব্যবহৃত হবে।
ইউনিক স্টাইল চিন্তা ভাবনা করুন- আপনি যখনি আপনার ব্রান্ড আইডেন্টিটি খুঁজে বের করেছেন তখনি আপনার আরেকটি কাজ এসে দাঁড়ায় আর তা হলো একটা ইউনিক স্টাইল চিন্তা করা।
ঠিকঠাক টাইপোগ্রাফি নির্বাচন করুন - একটা লগোর অনেকটাই নির্ভর করে এর টাইপগ্রাফি এর উপর। আপনি কেমন ফন্ট ব্যবহার করছেন, কেমন ফন্ট স্ট্যাইল ব্যবহার করছেন তার উপর। তাই টাইপগ্রাফি ঠিক রাখবেন।
কালার কম্বিনেশন ঠিক রাখুন- লগো এর রঙ কিন্তু অনেকাংশে একটা মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। তাই আপনার কালার কম্বিনেশন যদি না ভালো হয় তবে লোগো ভালো হওয়ার চান্স অনেক কম। তাই রঙের প্রতি খেয়াল দিতে হবে।
পরিশেষে-
লগো ডিজাইন বর্তমানে তুমুল জনপ্রিয় একটি কাজ। আর এর ডিমান্ড ও প্রচুর। আপনি একবার বাইরের মার্কেটপ্লেস যেমন আপ-ওয়ার্ক কিংবা ফাইভার এর দিকে তাকালে বিষয়টা বুঝতে পারবেন। এর বর্তমান পরিস্থিতি যেমন ভালো তেমন ভবিষ্যতেও আরো ভালো কিছু হবে আশা করা যায়।
তাই আপনি যদি এই সেক্টরে আসতে চান তাহলে সেটাই হতে পারে আপনার একটা লাইফ চেঞ্জিং সিদ্ধান্ত। তবে কথা কিন্তু একটাই আর তা হলো আপনাকে অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
শুরুতেই আপনি কখনোই কাজ পাবেন না এটা সবারই জানা। তবে আমাদের উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি একটু হলেও তাড়াতাড়ি আপনার কাজটায় সাফল্য পেতে পারেন।
আশা করি উপরোক্ত কথাগুলো আপনার কাজে লাগবে। আর সত্যিই যদি এ পেশায় আসতে চান তবে সর্ব চেষ্টা দিয়ে আসুন। দেখবেন সাফল্য পাবেন। ধন্যবাদ।
You must be logged in to post a comment.