কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন।

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কথা ভাবছেন কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবেন জানেন না? কিভাবে নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা উচিত তার একটি সম্পন্ন গাইডলাইন দেবো আজকে।

ফ্রিল্যান্সিং আপনার ধারণার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। কিছু লোক বিশ্বাস করে যে, ‌যে কেউ একটি ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ হলেই অনলাইনে অর্থ উপার্জন করা যায়। কিন্তু, এটা সত্য নয়।

যদি আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়ার এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক হন তাহলে নিচের ১০টি টিপস আপনার ফ্রিল্যান্সিং যাত্রা শুরু করতে সাহায্য করবে। 

১. প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকা

ফ্রিল্যান্সিং দ্রুত ধনী হওয়ার বিষয় নয়। এর জন্য অনেক পরিশ্রমের প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে, একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ভালো পরিমাণের টাকা আয় করতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যায়। যদি দ্রুত অর্থ উপার্জনের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু না করাই ভালো।

আমি প্রায়ই অনেকের কাছ থেকে প্রশ্ন পাই যে শুধু একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে কিনা। উত্তর হল না।

স্মার্টফোনের অ্যাপের বৈশিষ্ট্য সীমিত। সঠিকভাবে কাজ করার জন্য, ভালো ফলাফলের জন্য এবং প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার চালানোর জন্য আপনার একটি কম্পিউটার প্রয়োজন।

সুতরাং, অনলাইনে কাজ করার কথা ভাবার আগে নিজের একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থাকা প্রয়োজন।

২. একটি চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা খোজা

Find dimandable skill

ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এমন একটি দক্ষতা খুঁজে বের করা যার মাধ্যমে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। এটি যেকোন ধরনের দক্ষতা হতে পারে।

যাই হোক না কেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে জয়ের মূল চাবিকাঠি হল দক্ষতা খুঁজে বের করে মার্কেটপ্লেসে সেটার চাহিদা কেমন চাহিদা রয়েছে সেই সম্পর্কেও জানা।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন এ পারদর্শী হন, তাহলে UpWork বা Freelancer-এর মতো একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে যান এবং সেই ধরনের কাজের জন্য জব আছে কিনা তা যাচাই করুন।

আপনার দক্ষতার জন্য যদি সেই সাইটগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাজ থাকে, তাহলে আপনি একটি চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতাকে বেছে নিয়েছেন।

৩. নিজের দক্ষতাকে বৃদ্ধি করা

Increase your skill

একটি চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা খুঁজে পাওয়ার পর আপনার উচিত সেই দক্ষতাকে ভালভাবে আয়ত্ত করা। যে কোন কিছুর মাধ্যমে আপনি আপনার দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে পারেন। যেকোনো দক্ষতাকে রপ্ত করতে হলে সেই দক্ষতার মৌলিক বিষয়গুলো আগে জানতে হবে।

তারপর ধীরে ধীরে শিখে সেই দক্ষতার ওপর এক্সপার্ট হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য দক্ষতা সম্পর্কিত বই পড়ুন, বিভিন্ন YouTube চ্যানেলে ফলো করুন এবং সেই সম্পর্কিত ব্লগগুলি পড়ুন।

এছাড়াও, ট্রাস্টেড প্ল্যাটফর্ম থেকে অনলাইন কোর্স গ্রহণ করা একটি দক্ষতা সঠিকভাবে শেখার এবং বৃদ্ধি করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। 

একটি দক্ষতা অন্যভাবে আয়ত্ত করতে সময় লাগে. তাই ধৈর্য ধরুন এবং শিখতে থাকুন এবং অনুশীলন করুন।

৪. নিজের খ্যাতি তৈরি করা

vecteezy_working-from-home-flat-design-male-working-with-his-laptop_6041228.jpg

আপনার দক্ষতা এবং কাজ প্রমাণ করতে পারে আপনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবেন কি না তা । আপনার যতই অভিজ্ঞতা থাকুক না কেন আপনি যদি ক্লায়েন্টদের কাছে প্রমাণ করতে না পারেন যে আপনি যা করেন তাতে আপনি দক্ষ, তারা আপনাকে কখনই নিয়োগ দেবে না। এজন্য আপনার উচিত নিজের খ্যাতি তৈরি করা। 

আপনি যদি একজন কনটেন্ট রাইটার হন, তবে আপনার জনপ্রিয় ব্লগে প্রকাশিত আর্টিকেল থাকা উচিত। আপনি যদি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হন তবে আপনি জনপ্রিয় কোনো ব্র্যান্ডের লোগো তৈরি করা উচিত যাতে বলতে পারেন যে আপনি তাদের লোগো ডিজাইন করেছেন।

সুতরাং, আপনার যদি প্রয়োজন হয় তবে প্রথমে কিছু ফ্রি কাজ করুন। সর্বশেষে বলবো আপনি আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরিতে কাজ করুন।

৫. একটি পোর্টফোলিও তৈরি করা

Make your portfolio

আপনি যখন আপনার খ্যাতি তৈরি করা শুরু করবেন, তখন আপনার সমস্ত কাজকে এক জায়গায় আনতে একটি পোর্টফোলিও তৈরি করতে ভুলবেন না। একটি পোর্টফোলিও একটি ওয়েবসাইট বা একটি ওয়েবপেজ হতে পারে যেখানে আপনি আপনার সমস্ত কাজ একসাথে রাখতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হন, আপনি আপনার সমস্ত ডিজাইন দেখাতে Behance-এর মতো একটি সাইটে একটি পোর্টফোলিও পেজ তৈরি করতে পারেন।

ফলস্বরূপ আপনি যখন একজন ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করবেন, তখন আপনি আপনার দক্ষতা দেখানোর জন্য সেই সেই তৈরিকৃত পোর্টফোলিওর লিঙ্কটি দিতে পারেন।

পোর্টফোলিওতে শুধুমাত্র আপনার সেরা কাজগুলো অন্তর্ভুক্ত করবেন।

৬. পার্ট-টাইম ফ্রিল্যান্সিংয়ের চেষ্টা করা

4890375.jpg

ফ্রিল্যান্সিং সবার কাছে চায়ের কাপ নয়, যে সবাই সব সময় ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবে। আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য সঠিক ক্যারিয়ারের পথ কিনা, তবে এটি পার্ট-টাইম করার চেষ্টা করুন। ছোট ফ্রিল্যান্স গিগগুলিতে কাজ করে প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা ব্যয় করুন।

আর শিখে নিন ফ্রিল্যান্সিং এর উপায়। আপনি যখন বড় কোন প্রজেক্টে এ কাজ করার জন্য প্রস্তুত বোধ করবেন, তখন আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে আপনি পূর্ণ-সময়ের ফ্রিল্যান্স করবেন নাকি আপনার দিনের চাকরি ছেড়ে দেবেন।

৭. সঠিক ফ্রিল্যান্সং প্ল্যাটফর্ম খোজা

Search.jpg

আপনি কত সহজে কাজ পাবেন এবং কতো ভালো ক্লায়েন্ট পাবেন সেটার জন্য এই ধাপটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিগিনার ফ্রিল্যান্সাররা যে ভুলটি করে তা হল সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস( UpWork বা Freelancer.com এর মত) খোঁজে এবং সেখানে কাজ শুরু করে। এই সাইটগুলি ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার দ্বারা পরিপূর্ণ তাই সেখানে প্রতিযোগিতার হার অনেক বেশি। 

তাই সর্বোত্তম পন্থা হল, একটি মার্কেটপ্লেস বাছাই করা যা মোটামুটি নতুন এবং সেখানে যোগদান করা। এতে কম ফ্রিল্যান্সার থাকবে তাই প্রতিযোগিতাও কম হবে। ফলে এটি আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে।

৮. সঠিক মূল্য চার্জ করা

vecteezy_call-center-operators-talk-to-customers-who-have-purchased_.jpg

আপনার কাজের জন্য সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কারণ আপনি যদি ভুল মূল্যে নির্ধারণ করেন, তাহলে ক্লায়েন্টরা কখনই আপনাকে নিয়োগের কথা বিবেচনা করবে না।

শুরুতে, সঠিক মূল্য নির্ধারণের সর্বোত্তম উপায় হল জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলিতে যাওয়া এবং আপনার মত একই দক্ষতার অন্যান্য ফ্রিল্যান্সাররা কী চার্জ নিচ্ছে তা দেখুন।

যেহেতু আপনি নতুন, অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের মতো একই দাম নেওয়া ঠিক নয়৷ তার পরিবর্তে, আপনি একটি মাঝামাঝি দাম খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন যেখানে আপনি নিজেকে সস্তা বলে মনে না করে সেই অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের তুলনায়‌ প্রতিযোগিতামূলক মূল্য দিতে পারেন।

৯. প্রথম প্রস্তাব পাঠানো

একজন ক্লায়েন্টের কাছে একটি প্রস্তাবনা লিখতে হবে সতর্কতার সাথে। এটি কোনো ইমেল লেখা বা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট লেখার মত নয়। আপনাকে এটিতে গুরুত্ব দিতে হবে এবং অন্য সমস্ত ফ্রিল্যান্সারদের পরিবর্তে আপনার ক্লায়েন্টকে কীভাবে আপনাকে চাকরি দেওয়ার জন্য রাজি করানো যায় তা বের করতে হবে।

প্রস্তাব লেখার সময় আপনি আপনার সুবিধার জন্য কিছু টিপস এবং হ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোর জন্য ইন্টারনেটে এই লিখে (how to write freelance Proposal in marketplace) সার্চ করতে পারেন

১০. প্রত্যাশার বাইরে ডেলিভারি করুন

vecteezy_star-rating-client-feedback-customer-review-survey-for_6582446.jpg

একবার আপনি কাজ পেয়ে গেলে, পরবর্তী ধাপ হল নিশ্চিত করা যে আপনাকে ক্লায়েন্ট যেভাবে অনুরোধ করেছে ঠিক সেইভাবে আপনি প্রজেক্ট ডেলিভারি করেছেন। এই ক্ষেত্রে, আমি বলব আপনি ক্লায়েন্টের প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে কাজটি অতিরিক্ত ডেলিভারি করুন৷ এতে ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি বেশি সন্তুষ্ট হবে।

তাই এমন কাজ করার উপায় খুঁজুন যা প্রত্যাশার বাইরে যায়। এবং ভিড় থেকে আলাদা হতে শিখুন। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী ক্যারিয়ার গড়ার এটাই একমাত্র উপায়।

শেষ কথা:

আপনি এখন ফ্রিল্যান্সিং এর দুনিয়া মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। অনেক নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রমের সাথে, আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে একটি লাভজনক এবং সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারবেন।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles