ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?

বর্তমান সময়ে ফেসবুক জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ২.৯ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। বেশিরভাগ মানুষ ফেসবুক আনন্দ বিনোদনের জন্য ব্যবহার করলেও আপনি চাইলে ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। 

এই পোস্টে ফেসবুক থেকে টাকা ইনকামের সেরা উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?

ফেসবুক মনিটাইজেশন, ফেসবুক পেইড ইভেন্ট, অনলাইন স্টোর, আফিলিয়েট মার্কেটিং, রিসেলিং করে, ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে এবং সার্ভিস সেল করে ফেসবুক থেকে আয় করা যায়।

এই পোস্টে ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় তা সুন্দরভাবে বলা হয়েছে। এজন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেল ভালো করে পড়ুন।

ফেসবুক থেকে আয় করার ৮টি উপায় হলোঃ

১. ফেসবুক মনিটাইজেশন

২. ফেসবুক পেইড ইভেন্ট

৩. Brand Collaboration.

৪. অনলাইন স্টোর

৫. আফিলিয়েট মার্কেটিং

৬. রিসেলিং করে

৭. ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে

৮. সার্ভিস সেল করে

এই ৮টি মাধ্যমে ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করবেন তা বিস্তারিত ও সুন্দরভাবে আলোচনা করা হলো।

১. ফেসবুক মনিটাইজেশন:

ফেসবুক থেকে আয় করার সেরা একটি উপায় হলো ভিডিও মনিটাইজেশন। ফেসবুক পেজ এ ভিডিও আপলোড করে আপনি সহজেই টাকা ইনকাম করতে পারবেন। মানে ইউটিউব থেকে যেভাবে টাকা আয় হয় সেরকম। 

অসংখ্য মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। আর মানুষ ফেসবুকে ভিডিও দেখতে অনেক পছন্দও করে। আপনার ভিডিও যত বেশি মানুষ দেখবে, আপনার ফেসবুক ভিডিওতে যত বেশি ভিউ হবে, আপনার ইনকামও তত বেশি হবে।

এজন্য আপনাকে প্রতিনিয়ত মানসম্মত ভিডিও আপলোড করতে হবে।

যদি আপনি ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে টাকা উপার্জন করতে চান তাহলে, একটি ফেসবুক পেজ থাকতে হবে। এবং সেখানে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে হবে। 

ফেসবুক পেজে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে সহজেই হাজার হাজার টাকা উপার্জন করা যায়।  একটি সুন্দর ফেসবুক পেজ তৈরি করা তেমন কোনো কঠিন কাজ না। এবং ফেসবুক পেজে ভিডিও আপলোড করাও খুব সহজ।

ফেসবুক মনিটাইজেশন পেতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। ফেসবুক মনিটাইজেশনের জন্য শর্ত হলোঃ

১. দশ হাজার (১০,০০০) ফলোয়ার।
২. ৩ মিনিটের ভিডিও থেকে ১ মিনিট করে মোট ৩০,০০০ মিনিট ভিউ, ৬০ দিনের মধ্যে। অর্থাৎ যেসব ভিডিওর দৈর্ঘ্য ৩ মিনিটের বেশি সেই সব ভিডিও মানুষ যদি ১ মিনিট করে মোট ৩০,০০০ মিনিট দেখে তাহলে আপনি মনিটাইজেশনের জন্য যোগ্য হবেন।

২. ফেসবুক পেইড ইভেন্ট:

আপনি হয়ত এমন অনেক ওয়েবসাইট দেখেছেন, যেখানে কোনো বিষয়ে কোর্স করতে হলে আপনাকে টাকা দিয়ে কিনতে হয়, আপনি এটা নিশ্চয় দেখেছেন গুগল প্লে-স্টোর থেকে কোনো গেম বা অ্যাপ ডাউনলোড করতে হলে টাকা দিয়ে কিনতে হয়,

ঠিক তেমনই ফেসবুকে কেউ যদি আপনার ইভেন্টের অ্যাক্সেস (access) নিতে চায় তাহলে টাকা দিতে হবে।
যেসব মানুষ আপনার ইভেন্টের প্রতি আগ্রহী সেইসব মানুষ আপনার ইভেন্ট দেখার জন্য টাকা দিয়ে আপনার ইভেন্টের অ্যাক্সেস নিয়ে নিবে।

ফেসবুক পেইড ইভেন্টের স্কিনশর্ট

ফেসবুক পেইড ইভেন্টের স্কিনশর্ট। ২য় ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, ইভেন্ট টির অ্যাক্সেস নিতে 0.99$ দিতে হবে। 

কখন, কীভাবে করবেন?

আপনার ফেসবুক ফলোয়ার যখন বেড়ে যাবে,  অসংখ্য মানুষ যখন আপনার ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করতে শুরু করবে তখন আপনি তাদের জন্য পেইড ইভেন্ট চালু করতে পারবেন। শিক্ষামূলক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা কোনো বিশেষ কোর্স আপনি পেইড ইভেন্টের মাধ্যমে পরিচালনা করতে পারেন।

পেইড ইভেন্টের মাধ্যমে কোনো বিষয়ে টিপস দিয়ে, কোনো কাজ কীভাবে করে তা দেখিয়ে, ঐতিহাসিক বা দর্শনীয় জায়গা দেখিয়ে, টিউটোরিয়াল বা কোর্স করিয়ে, মাধ্যমিক বা ইউনিভার্সিটির ক্লাস করানোর মাধ্যমে আপনি সহজেই অনেক টাকা ইনকাম করতে পারেন।

আপনার কনটেন্ট যদি তথ্যবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে আপনার ভিডিও মানুষ টাকা দিয়ে হলেও দেখতে চাইবে।

৩. ফেসবুকে Brand Collaboration করে টাকা আয়:

আপনি আপনার ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে কেনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রচার করলেন এবং ঐ প্রতিষ্ঠান আপনার ফেসবুক পেজ এর প্রচার করবে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়াকে Collaboration বলা হয়। ফেসবুকে Collaboration করে অনেক টাকা আয় করা যায়।

মনে করুন কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের তেমন কোনো পরিচিত নেই। আপনি ঐ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনার ফলোয়ার'দের বলে দিলেন। এর ফলে অসংখ্য মানুষ ঐ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারলো।

এতে করে ঐ প্রতিষ্ঠানের সুনাম বা পরিচিতি কিছুটা বেড়ে যাবে। আর এই কাজ করার জন্য ঐ প্রতিষ্ঠান আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিবে। তাহলে ঐ প্রতিষ্ঠানেরও সুনাম বাড়ল এবং আপনিও টাকা পেলেন।

আপনি যেকোনো ব্র্যান্ড বা কোনো কোম্পানি, কোনো ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেল, কোনো অনলাইন শপ বা ওয়েবসাইট, কোনো প্রতিষ্ঠান, কোনো রেস্টুরেন্টে বা  বড় দোকানের সাথে Collaboration (কোলাবোরেশান) করতে পারেন।

৪. অনলাইন স্টোর:

আপনার যদি নিজস্ব কোনো দোকান থাকে তাহলে আপনার দোকানের জিনিসগুলো আপনি অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। বর্তমান সময়ে অনলাইনে কেনাকাটার অনেক বেশি চাহিদা রয়েছে, এজন্য এটি একটি লাভজনক উপায়।

আপনার দোকানের নামে একটা ফেসবুক পেজ তৈরি করুন এবং আপনার দোকান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে রাখুন। যেসব প্রোডাক্ট মানুষ অনলাইনে ক্রয় করতে বেশি ভালোবাসে সেইরকম প্রোডাক্ট বিক্রি করার চেষ্টা করুন।

আপনি চাইলে ইলেকট্রনিকস সামগ্রী এবং  পোশাক অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন।

৫. আফিলিয়েট মার্কেটিং:

আপনার যদি নিজস্ব দোকান না থাকে তাহলে আপনি আফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।
আপনার যদি ফেসবুক পেজে যথেষ্ট ফলোয়ার থাকে অথবা আপনার ফেসবুক গ্রুপ থাকে তাহলে সহজেই আফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন।

বর্তমান সময়ে হাজার হাজার মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করে থাকে, এজন্য আফিলিয়েট মার্কেটিং খুব সহজে অনেক টাকা আয় করা যায়।

আফিলিয়েট মার্কেটিং কি? আফিলিয়েট মার্কেটিং কীভাবে করে?

অনলাইনে হাজার হাজার শপ রয়েছে, যারা বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করে। আপনার কাজ হলো কোনো একটি প্রোডাক্ট এর লিংক আপনার ফেসবুক পেজ বা গ্রুপে শেয়ার করা। 

এখন কেউ যদি আপনার লিংকে ক্লিক করে ঐ প্রোডাক্ট ক্রয় করে তাহলে আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন। এটা অনেকটা রেফার করার মতো।

এজন্য আপনার যথেষ্ট ফলোয়ার অথবা গ্রুপ মেম্বার থাকতে হবে। আপনি আপনার বন্ধুদের কাছেও আপনার  আফিলিয়েট লিংক শেয়ার করতে পারেন।

৬. রিসেলিং করে টাকা আয়:

রিসেলিং করা অনেকটা আফিলিয়েট মার্কেটিং এর মতোই তবে কিছুটা ভিন্ন। আফিলিয়েট মার্কেটিং এ আপনি শুধু একটা লিংক শেয়ার করে থাকেন,  কিন্তু রিসেলিং এ কোনো প্রোডাক্ট আপনি নিজে বিক্রি করবেন। রিসেলিং এর মাধ্যমে ঘরে বসেই কোনো প্রোডাক্ট কম দামে ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন।

আপনার হয়ত নিজস্ব দোকান নেই এবং আফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করে কেউ অর্ডার করছে না তাহলে আপনি কি করবেন? তাহলে, কাস্টোমারের সাথে কথা বলে নিজেই অর্ডার নিয়ে নিবেন এরপর কোনো ট্রাস্টেড সাইট থেকে সেই প্রোডাক্ট টি ক্রয় করে আপনার কাস্টোমার কে পাঠিয়ে দিন।.

৭.ফেসবুক গ্রুপ থেকে টাকা ইনকাম:

আপনি অবাক হয়ে যাবেন এটা শুনে যে, ফেসবুক গ্রুপ থেকেও টাকা আয় করা যায়। ফেসবুক গ্রুপ থেকে বিভিন্ন উপায়ে টাকা আয় করা যায়। আপনি একটা গ্রুপ তৈরি সেখান থেকে টাকা আয় করতে পারবেন, যখন আপনার গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বেশি হবে।

আপনার গ্রুপের সদস্য যখন অনেক বেড়ে যাবে তখন আপনি কোনো প্রোডাক্ট বা কোনো ব্র্যান্ড প্রমোট করে টাকা আয় করতে পারবেন।  ওপরে আমি যে অনলাইন স্টোর, আফিলিয়েট মার্কেটিং, রিসেলিং এর কথা বললাম এগুলো আপনি ফেসবুক গ্রপের মাধ্যমেও করতে পারবেন।

আপনি যদি ভালো স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার মেধাবি বন্ধুদের নিয়ে একটা শিক্ষামূলক গ্রুপ তৈরি করতে পারেন। যেখানে আপনি এবং আপনার মেধাবি বন্ধুরা অন্য কোনো ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় সাহায্য করবেন।

এখান থেকে আয় করার উপায় হলো কোনো শিক্ষার্থী যখন কোনো বিষয় শেখার জন্য আপনার গ্রুপের সদস্য হতে চাইবে তখন তারা আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে সদস্য হয়ে যাবে। 

এইভাবে আপনার গ্রুপে যদি ১০০ জন শিক্ষার্থীও টাকা দিয়ে সদস্য হয় তাহলে আপনি অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আপনি ভালো ছাত্র না হলেও কোনো অভিজ্ঞ শিক্ষক কে দিয়ে আপনার গ্রুপের সদস্যদের শেখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন।

৮. সার্ভিস সেল করে টাকা আয়ঃ

ফেসবুকে বিভিন্ন সার্ভিস দিয়ে টাকা আয় করা যায়। আমি একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে  আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। বর্তমান সময়ের ট্রেন্ডিং একটা অনলাইন গেম হলো ফ্রি ফায়ার।

এই গেম সম্পর্কে সব জায়গার তরুণ ছেলেমেয়ে জানে এবং তারা এই গেম অনেক পছন্দ করে। একইসাথে এই গেমের জন্য তারা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে, গেমের বিভিন্ন আইটেম কেনার জন্য। ফ্রি ফায়ার (Garena Free Fire) গেমের বিভিন্ন আইটেম কেনার জন্য টাকা দিয়ে গেমের ডায়মন্ড (💎) টপআপ করতে হয়।

আর অফিসিয়ালি এই ডায়মন্ড কিনতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন হয় এবং তুলনামূলক বেশি টাকা প্রয়োজন। এজন্য যারা ফ্রি ফায়ার গেম খেলে তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজ থেকে টপআপ করে নেয়।

এই গেম ১ বিলিয়নেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে এবং জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। এই গেমের আইটেম কেনার জন্য কিছু তরুণ প্রায় আসক্ত। আপনি যদি আপনার ফেসবুক প্রোফাইল বা পেজ অথবা গ্রপের মাধ্যমে অন্যকে টপআপ করে দেন তাহলে অনেক লাভবান হবেন। এই সার্ভিস টির অনেক চাহিদা রয়েছে।

ত এখানে আমি আপনাদের একটা সার্ভিস সম্পর্কে বললাম, যার মাধ্যমে আপনি টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

পরিশেষে, যেকোনো কাজ করার জন্য অবশ্যইআপনার প্রচুর ইচ্ছেশক্তি থাকতে হবে। বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফল হতে হলে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়।

কোনো ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কম, কোনো ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বেশি। এজন্য আপনাকে ধৈর্য ধারণ করে প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles