ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসা হতে পারে আত্ম কর্মসংস্থানের একটি অন্যতম উৎস

আত্ম কর্মসংস্থানের আরো একটি উৎস  ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসা। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) কি এবং ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) কারা। এর সুবিধা ও অসুবিধা এবং এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

ফ্রীল্যান্সিং হতে পারে আত্নকর্ম সংস্থান এর উৎস ফ্রীল্যান্সিং হতে পারে আত্নকর্ম সংস্থান এর উৎস

আত্ম কর্মসংস্থানের আরো একটি উৎস  ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসা

নিজের কাজ নিজে করার নাম হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থান। সেটা আপনার চাকরী, ব্যবসা বা বৈধ যে কোন পেশা হতে পারে। তিনটি জিনিসের সমন্বয় হলেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে পারবেন। তা হচ্ছে ইউজার, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। মনে রাখবেন, ”নিজের কাজ নিজে করিতে লজ্জা নাই।” সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং কথাটা শুনে আঁতকে উঠার কিছু নেই, মোটামুটিভাবে আপনার কম্পিউটারে হাতে কড়ি থাকলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে পারবেন। শুধু দরকার হবে ধৈর্য্য ও ইচ্ছাশক্তি।

“পথ চলতে অনেক বন্ধু পাওয়া যায়, কিন্তু বন্ধুত্ব আশা করা যায় দু’এক জনের কাজ থেকে।” ঠিক অনুরূপ ফ্রিল্যান্সিং-এ অনেক সাইট আছে, আপনি সব সাইটে কাজ করতে পারবেন না। যেহেতু সময় এখানে ফ্যাক্টর। যে কোন দু’একটা সাইটে আপনি কাজ করতে পারবেন যাতে আপনার উপার্জন ভাল হয় সেভাবে।

১৯৯৮ সালে একটা মার্কেটপ্লেস এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং এর যাত্রা। ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সার দুইটি পক্ষ থাকে। যখন ইচ্ছা তখন কাজ করলেই হলো। ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সারকে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে কাজ দেয় আর ফ্রিল্যান্সার তার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে তার প্রাপ্য বুঝে নেই। ধরাবাধা কোন অফিস টাইম না থাকায় ব্যাপারটা বেশ জনপ্রিয়তা পেল।

ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) ও ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) বলতে কি বুঝায়?

Free-এর আভিধানিক অর্থ মুক্ত, স্বাধীন, অবাধ, স্বচ্ছন্দ Lance শব্দের সাথে ing যোগ করে Lancing শব্দটা করা হয়েছে। সুতরাং Freelancing বলতে মুক্ত বা স্বাধীনভাবে কাজ করা। আরো বিস্তারিতভাবে বললে বলতে হয় কারো অধীন বা পরাধীন না হওয়া। স্থায়ীভাবে একটি সংস্থায় যুক্ত না হয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার হয়ে কাজ করা Freelancing আওতায় পড়ে। অর্থাৎ স্বাধীনভাবে যে কোন কাজ করাকেই ফ্রিল্যান্সিং বলে। আর যারা এমন কাজের সাথে যুক্ত তাদের বলা হয় Freelancer.

নিজ দায়িত্বে স্বাধীনভাবে কার্যসম্পাদনের জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের যে কোন একটির মাধ্যমে কাজ যোগাড় করে ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের একটি প্যাসিভ পদ্ধতি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। একজন Freelancer মাকের্টপ্যালেসে দু’ভাবে কাজ করতে পারে ফুলটাইম (Full Time) আর পার্ট টাইম (Part Time). বর্তমানে Freelancer-দের চাহিদা সারাবিশ্বে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে সাথে বাড়ছে প্রতিযোগিতা। সুতারং টিকে থাকতে হলে ভাল কাজ জানতে হবে আর জানতে হলে শিখতে হবে, শিখতে হলে পড়তে হবে। অধ্যবসায় ও পরিশ্রম আপনাকে স্বার্থক করতে পারে।

 একজন ফ্রিল্যান্সার যে কাজগুলো করতে পারে:- মনে রাখবেন অনলাইন শুধু আপনার বিনোদনের মাধ্যম নয় আয়েরও মাধ্যম হতে পারে। নিচের যে কোন একটি বা দুটি কাজে আপনি পারদর্শী হয়ে ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

Þ ফটোগ্রাফি                                    

Þ গ্রাফিক্স ডিজাইন (ইলেস্ট্রাশন, লগো, টিশার্ট, প্যাটার্ন ইত্যাদি)

Þ ডাটা এন্ট্রি

Þ প্রেজেন্টেশন

Þ এনিমেশন

Þ ওয়েব ডিজাইন                             

Þ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট       

Þ আর্টিক্যাল ও ব্লগ রাইটিং

Þ ওয়েবসাইট কনটেন্ট রাইটিং        

Þ প্রোজেক্ট ম্যানেজম্যান্ট    

Þ ট্রান্সক্রিপশন

Þ বুককিপিং ও ব্যাংক রিকোনসোলেশন

Þ ক্রিয়েটিভ রাইটিং

Þ কপিরাইটিং

Þ ওয়েব রিসার্চ

Þ নেটওয়ার্কিং

Þ সেলস মার্কেটিং

Þ কাস্টমার সার্ভিস

Þ ডাটা এনালাইটিক্স

বিভিন্ন ক্যাটাগরির এমন  অনেক কাজ আছে আবার প্রত্যেক ক্যাটাগরির মধ্যে সাবক্যাটাগরি রয়েছে যার মাধ্যমে একজন ফ্রিল্যান্সার তার যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে যে কোন একটি সাইটে কাজ করে ভাল আয় করতে পারে।

 

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য  জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ও তাতে আপনার করণীয়:-

১. Ffiverr.com

২. Freelancer.com

৩. Upwork.com

৪. Speedlancer.com

৫. Guru.com

৬. Flexjobs

৭. PPH (PeoplePerHour)

৮. oDesk.com

আরো অন্যান্য মার্কেটপ্লেস আছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, Facebook, Twitter, Instagram, Blogspot.com, YouTube চ্যানেল ইত্যাদির মাধ্যমেও আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করতে পারবেন।

আপনার করণীয়:-

১) সুন্দর ও গ্রহনযোগ্য একটি প্রোফাইল তৈরি করা।

২) কাজ খুঁজে বিড করা।

৩) কাজ সম্পন্ন করে অর্থ ও রেটিং নেয়া।

সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইংরেজি জানা ও বুঝা এবং ইংরেজি কথা বলতে পারা।

ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা:-

১) ফ্রিল্যান্সার নিজের পারিশ্রমিক নিজেই নির্ধারণ করে পছন্দমত কাজ নিতে পারে।

২) কারো অধিনে থাকতে হয় না এবং কেউ তার উপর কাজ চাপিয়ে দিতে পারে না।

৩) যে কোন একটি কাজের উপর দক্ষতা থাকলেই ফ্রিল্যান্সিং-এ কাজ করা যায়।

৪) কর্তার ইচ্ছায় কীর্তণ নয়, পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে একজন ল্যান্সারের।

৫) নিজের কাজের পরিকল্পনা নিজেই করতে পারে, কোন প্রাতিষ্ঠানিক ছক মেনে কাজ করতে হয় না।

৬) ডলারের মাধ্যমে আয় বিধায় টাকায় অংকে তা ভাল একটা পারিশ্রমিক হয় এবং আমাদের দেশে রিজার্ভ বাড়ে।

 ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধা:-

১) প্রথম কাজ পাওয়া একটু কষ্টকর এবং ক্লায়েন্ট সন্তুষ্ট করা একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার।

২) প্রতিনিয়ত প্রতিযোগী বাড়ছে, বিড করে প্রতিযোগীতায় আসা ও টিকে থাকা এবং সফলতা আনা একটু কষ্টসাধ্য।

৩) অনেক সময় কাজ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

কিছুটা অসুবিধা থাকলেও বলব ফ্রিল্যান্সিং প্রচুর সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। বর্তমান সরকার আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করেছে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টাচ্ছে এই কাজের উপর।

ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব:-

এটা কোন খুচরা বা পাইকারি ব্যবসা নয় সম্পূর্ণ অনলাইন ব্যবসা। ফ্রিল্যান্সাররা মার্কেটপ্লেসে সুসংগঠিত একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে কাজ খুঁজে অথবা যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দেখে ক্লয়েন্টরা ফ্রিল্যান্সার খুঁজে কাজ দেয়।

এই ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসা একটা সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন করে এনে দিয়েছে দারুন এক সুযোগ যা দিয়ে নিজেদের মেধা ও শ্রম কাজে লাগিয়ে বৈদেশিকমুদ্রা উপার্জন করে নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছে এবং মুদ্রাবাজার-এ এর সু-প্রভাব ফেলছে। সুতরাং এর মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণ করা, স্বাবলম্বী হওয়া ও সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments
Md Shohidul islam - Jun 27, 2021, 6:13 PM - Add Reply

Nice

You must be logged in to post a comment.

You must be logged in to post a comment.

Related Articles