ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা

আমরা সবাই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানি। এটি হলো একধরনের মুক্তপেশা। এর মাধ্যমে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে অন্যের কাজ করার বিনিময়ে আয় করা যায়। 

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এখন অনেকেই নিজের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে এবং সঠিক উপায়ে কাজ করে আয় করে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো এই কাজটি একটি পেশা হিসেবে সকলের কাছে স্বীকৃতি পায়নি।

আবার ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। 

আজকের আলোচনা মূলত সেসব ভুল ধারণা গুলোকে কেন্দ্র করেই তৈরি করা হয়েছে।

১.রাত না জেগে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় না

এটি হলো ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আমাদের সমাজের একটি প্রচলিত ভুল ধারণা। তবে হ্যা ,যারা নতুন তাদের রাত জেগে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ খুঁজতে হয়। কেননা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের অধিকাংশ ক্লায়েন্ট ইউরোপ, আমেরিকা,কানাডা প্রভৃতি দেশের হয়ে থাকে।

তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাদের দেশে যখন দিন ,তখন আমাদের দেশে মাঝরাত। তাই বেশি বেশি কাজ পাওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্সার দের রাত জাগতে হয়,তবে সবসময় না। দিনের বেলায়ও চাইলে কাজ খুঁজে কাজ করে দেয়া যায়।এটা সম্পূর্ণ ফ্রিল্যান্সারের ওপর নির্ভর করে। 

আবার অনেকে চাকরি বা পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে থাকে ,তাদের জন্য রাতে কাজ করাই উপযোগী। 

২.কোনো চাকরি না পেয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে:

আমাদের সমাজের অনেকেই বলে ফ্রিল্যান্সাররা নাকি কোনো চাকরি না পেয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে। অর্থাৎ তারা ফ্রিল্যান্সিং এর কাজকে সহজ ও সস্তা মনে করে।

এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কোনো অফিশিয়াল চাকরীর তুলনায় ফ্রিল্যান্সিং অনেক কঠিন একটি কাজ।যার জন্য নিজের স্কিল থাকতে হয় ও নিজের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকতে হয়। এখানে একটি কাজ যথার্থভাবে শিখে তারপরই কাজ করা যায়।

প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা করতে হয় সব ফ্রিল্যান্সারদের সাথে। ফ্রিল্যান্সিং এর মূল জিনিসটাই হলো কাজে দক্ষতা।আর ফ্রিল্যান্সাররা ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন।তাই এই কাজকে ছোট বা সস্তা মনে করার কোন উপায় নেই। 

৩.কম্পিউটার কিনলেই ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়

অনেকে মনে করে,অমুকের কম্পিউটার আছে তার মানে সে ফ্রিল্যান্সার। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তেমন না। শুধু কম্পিউটার থাকলেই হবে না, নিজের স্কিলও থাকতে হবে।কোনো একটি ফ্রিল্যান্সিং কাজে দক্ষ হতে হবে। তাহলেই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করা সম্ভব।তবে এখন মোবাইলেও অনেক ফ্রিল্যান্সিং এর স্কিল শেখা যায় এবং কাজও করা যায়। 

৪.শুধু ভিডিও দেখেই ফ্রিল্যান্সিং শেখা যায় 

ভিডিও দেখে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া গেলেও কখনোই সম্পূর্ণ ভাবে শেখা যায় না। এজন্য কোনো স্কিল সম্পর্কে কোর্স করতে হয় বা দক্ষ কোনো শিক্ষকের কাছে শিখে নিতে হয়। এতে দ্রুত সেই বিষয় আয়ত্ব করা সম্ভব হয়।ভিডিও দেখে শেখা আর হাতে কলমে শেখা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। এজন্য এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। 

৫.ফ্রিল্যান্সিং এর কোনো নিশ্চয়তা নেই

অনেকে আবার ভাবেন সাধারণ চাকরীর চেয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই,টাকার পরিমাণও নির্দিষ্ট না। এ ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক। কারণ ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে গতানুগতিক চাকরীর চেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করা যায়।

আবার যদি কাজ ঠিকমতো না করা হয় তবে ইনকামের পরিমাণও কম হবে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে ফ্রিল্যান্সার এর ওপর,যে তিনি কতটুকু কাজ করছেন।আর এখন আসি নিশ্চয়তার ব্যাপারে , আমি অনেককে দেখেছি ১০ বছর ধরে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের সাথে যুক্ত থাকতে । আবার অনেকেই ২-৩ মাস কাজ করে আর চালিয়ে যেতে পারেন না। এটি সম্পূর্ণ ফ্রিল্যান্সারের ওপরই নির্ভর করে। 

পরিশেষে বলা যায়, 

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার নিয়ে সমাজে প্রচলিত ধারণার শেষ নেই। আর তার মধ্যে যে সবটাই সত্য তা কিন্তু নয়। তাই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করার ইচ্ছা থাকলে ধৈর্য ধরে নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে কাজে লেগে পড়লে সফলতা আসবেই। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ