ফ্রিল্যান্সিংয়ের পূর্বশর্ত: ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য কোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা থাকা একান্ত জরুরি। তার সঙ্গে আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের উপরেও ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। তবে একজন ফ্রিল্যান্সার যদি কম্পিউটারের একাধিক বিষয়ের উপর দক্ষ হয়।
তাহলে স্বভাবতই বড় পরিধিতে কাজ করা এবং অর্থ উপার্জন করা সহজ হয়। এছাড়াও ক্লায়েন্ট/বায়ারগণ বেশিরভাগই হবেন অবাঙালি, সুতরাং তাদের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমই হচ্ছে ইংরেজি ভাষায়। তারা স্কাইপি, টুইটার বা অন্য ম্যাসেঞ্জার সার্ভিসের মাধ্যমে আপনার ইন্টারভিউ নিতে পারেন। তাই ইংরেজির ওপর ভালো দখল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রিল্যান্সিং করার প্রথম প্রধান শর্তই হচ্ছে ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা অর্জন।
ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে সম্পন্ন হয়
যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি (Employer) তার কোনো কাজ আউটসোর্সিং করাতে চান, তাহলে তিনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে এসে সে-কাজটির জন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে বিড (Bid) আমন্ত্রণ করেন। একটি বিডের মধ্যেএকজন ফ্রিল্যান্সার উল্লেখ করেন যে তিনি কত দিনের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারবেন, এজন্য তার পারিশ্রমিক কত হবে।
এভাবে একটি কাজের যে কয়টি বিড হয় সেগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে যোগ্য এবং সুবিধাজনক বিডটিকে Employer নির্বাচন করেন। এরপর সে-ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন এবং কাজের বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করেন। কাজ শেষে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পেমেন্ট করা হয় যা ‘অর্থ উত্তোলনের বিভিন্ন মাধ্যম অংশে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
শুরুটা যেভাবে
একজন ক্লায়েন্ট আপনাকে তখনই কাজ দেবেন, যখন তিনি আপনার প্রোফাইল দেখে সন্তুষ্ট হবেন এবং আপনি যে অ্যামাউন্ট বিড করবেন তা তার মনঃপুত হবে। সুতরাং সবার প্রথমেই আপনাকে এমন একটি সুন্দর ও গোছানো প্রোফাইল বানাতে হবে যা দেখে যেকোনো বায়ার আপনার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হবেন।
একই সঙ্গে আপনি বিভিন্ন মার্কেট প্লেস ঘুরে দেখুন, সেগুলোর চাহিদা সম্পর্কে জানুন এবং আপনার প্রোফাইলটি সে-অনুযায়ী গড়ে তুলুন। ফ্রিল্যান্সিং সাইটে কাজ শুরুর পূর্বে অবশ্য একটি আদর্শ প্রোফাইল কাজ পাবার লক্ষ্যকে সুনিশ্চিত করে।
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণা
● পড়ালেখা না জেনেও ফ্রিল্যান্সিং সম্ভব।
● ফ্রিল্যান্সিং শুরুর জন্য প্রাথমিক মানসিকতাই যথেষ্ট।
● ফ্রিল্যান্সিং শুরুর জন্য নিজের নামে. পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
● ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে ট্রেনিং সেন্টারের সহায়তা অবশ্যই লাগবে।
● সায়েন্সের স্টুডেন্ট না হলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করা যায় না।
● কোথাও কোনোভাবে আয় করতে পারছে না, তাহলে শেষ গন্তব্য ফ্রিল্যান্সিং।
● ফ্রিল্যান্সিং মানেই আপওয়ার্ক, ই-ল্যান্স. ইত্যাদি জায়গাতে কাজ করা।
● ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য খুব বেশি. যোগ্যতার দরকার নেই।
● ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অসাধারণ. ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হয়।
● ফ্রিল্যান্সিং চাকরি কিংবা পড়ালেখার. পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি হতে পারে, ফুলটাইম নয়।
● চাকরিতে সবসময় টাকা আসার নিশ্চয়তা থাকলেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা অনিশ্চিত।
● বিদেশিদের মতো ইংরেজি না জানলে. ফ্রিল্যান্সার হওয়া যাবে না।
সাধারণত ইন্টারনেট থেকে আয়ের অনেক পথ রয়েছে, আবার প্রতারণার ফাঁদও আছে। তাই সাবধানতার সঙ্গে বুঝেশুনে এগুতে হবে। অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পথ চললে সফল হওয়া সহজ। এখন চাকরি না পেলে বিদেশ যাবার প্রয়োজন হয় না। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই মাসে পনেরো হাজার থেকে লাখ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব।
তবে এক ক্লিকে এক কোটি ডলার বা সাইনআপ করেই পঞ্চাশ হাজার ডলার নিয়ে নিন, এমন কিছু এখানে পাবেন না। জেনে রাখা ভালো, PTC, Add Click-এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন ক্ষণস্থায়ী এবং অনেক সময় এটি প্রতারণার একটা অভিনব পদ্ধতিও বটে। অতএব ফ্রিল্যান্সিংয়ে দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের যোগ্যতা
১. ইন্টারনেটের ওপর জীবনকে নির্ভরশীল. করতে পারলে ফ্রিল্যান্সিং-এ সফল হবেন।
২. ফ্রিল্যান্সিংকে শুধু পার্টটাইম হিসেবে না. ফুলটাইম ক্যারিয়ার ভাবা শুরু করতে. হবে।
৩. যে যত বেশি গুগলের ওপর নির্ভরশীল, তারসফলতার সম্ভাবনা তত বেশি।
৪. যত বেশি কিছুতে যত বেশি দক্ষ হবেন, সফল হতে পারবেন তত বেশি।
৫. সবসময় নিজেকে আরো বেশি দক্ষ করে. গড়ে তুলতে হবে।
৬. কমিউনিকেশন দক্ষতা ফ্রিল্যান্সিংয়ের. সফলতাকে অনেক বাড়িয়ে দেয়।
৭. প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ছাড়া কিছুতেই সফল. হওয়া যায় না।
৮. ইংরেজি ভাষায় যত ভালো হবেন, তত. বেশি সফল হবেন।
৯. ধৈর্যশক্তি ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য অত্যন্ত. গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
১০. টাকাকে নয়, কাজকে ভালোবাসতে. শিখতে হবে।
কোনো ধরনের যোগ্যতা ছাড়া, কষ্ট ব্যতীত আয়গুলোর পরিমাণ অনেক কম হবে এবং স্থায়ীত্ব হবে না। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে দক্ষ লোকদের মূল্য অনেক বেশি। দক্ষলোকদের জন্য অনলাইন থেকে মাসে ১/২ লাখ টাকা আয় করা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। সেক্ষেত্রে আপনার অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কিংবা আপনার বয়স কোন ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
এদেশে নারী কিংবা প্রতিবন্ধী যাদের জন্য ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করা কষ্টসাধ্য, তারাও ফ্রিল্যান্সিং শিখে পরিবারের অর্থনীতিতে অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারেন।
You must be logged in to post a comment.