বরিশাল জেলার বিখ্যাত বিখ্যাত জায়গায়।

 বরিশাল জেলার উৎপত্তিস্থল বাকেরগঞ্জ জেলায় যা ১৭৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বরিশাল বিভাগে স্থাপিত হয় ১ জানুয়ারি ১৯৯৩ সালে। বরিশাল জেলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। 'চন্দ্রদ্বীপ' নামক এই স্বাধীন রাজ্যটি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় মুসলিম শাসনামলে রাজা দনুজমর্দন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত অঞ্চলটি চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই রাজ্য প্রতিষ্ঠার আগে এই অঞ্চলটি 'বাকলা' নামে পরিচিত ছিল। 'বাকলা' অর্থ শস্য ব্যবসায়ী যা আরবি শব্দ থেকে এসেছে।

ডাঃ কানুনগো নামে এক ব্যক্তি বাকলা বন্দর নির্মাণ করেন। আরব ও পারস্য বণিকরা ব্যবসার জন্য এই সমুদ্রবন্দরে আসতেন। একটি অতি প্রাচীন বিদেশী মানচিত্রে 'বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ' নামটি বড় অক্ষরে দেখা যায়। ১৭৯৬ সাল পর্যন্ত জেলাটি বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। 

১৭৯৭ সালে ঢাকা জেলার দক্ষিণ অংশ নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮০১ সালে জেলার সদর দপ্তর বাকেরগঞ্জ জেলা বরিশালে (গিরদে বন্দর) স্থানান্তর করা হয়। ১৮১২ সালে এই জেলায় ১৫টি থানা ছিল।

বরিশালের নামকরণ নিয়ে নানা মতবাদ রয়েছে। বড় উইলো গাছের কারণে (বোরো + শাল) = বরিশাল; পর্তুগিজ বেরি ও শেলির প্রেমের গল্পের জন্য বরিশাল বড় লবণ বলের জন্য বরিশাল। বরিশাল জেলায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

বরিশাল জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ:

১. শাপলা গ্রাম

২. দুর্গা সাগর

৩. ঝাউ বন কুয়াকাটা

৪. পেয়ারার ভাসমান বাজার

৫. কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির

৬. গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন

৭. লেবুর চর

৮. ফাতরার চর বা টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

৯. বিবির পুকুর

১০. লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বরিশাল জেলার ১০ টি দর্শনীয় স্থান:

১. শাপলা গ্রাম, সাতলা

শাপলা গ্রাম সাতলা। শাপলার রাজ্য বলা হয়।. বিলের পানিতে ফুটে থাকা হাজারো লাল শাপলা সূর্যের লাল আভাকেও হার মানাতে পারে। এটি পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে যাওয়ার জন্য একটি দুর্দান্ত পর্যটন স্পট। বরিশাল সদর থেকে সাতলা গ্রামের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের বিলগুলো স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিত।

২. দুর্গা সাগর

দুর্গা সাগর দক্ষিণের বৃহত্তম হ্রদ। শহরের জীবন থেকে মুক্তি পেতে একটি সুন্দর জায়গা। বরিশাল শহর থেকে যেতে হবে প্রায় ১০ কিলোমিটার। শীতকালে বিদেশ থেকে পাখি এসে সেখানে থাকে। এটি বাবুগঞ্জ উপজেলায় এবং বরিশাল জেলা থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে গুঠিয়া মসজিদ খুব বেশি দূরে নয়। হ্রদের জল স্পষ্ট এবং শান্ত। লেকের মাঝখানে একটি ছোট দ্বীপ (একগুচ্ছ গাছ) আছে।

৩. ঝাউ বন কুয়াকাটা

কুয়াকাটার ঝাউ বন উপকূলীয় এলাকা রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জেলেদের সহায়তার জন্য রোপণ করা হয়েছিল। এখন এগুলো কুয়াকাটার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। কুয়াকাটা ভ্রমণের সময় একজন পর্যটক ঝাউ বনও দেখতে পারেন। এটি বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ কুয়াকাটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। ঝাউ বনের দৃশ্য স্থানীয়ভাবে 'কাওয়ার চর' নামে পরিচিত।

৪. পেয়ারার ভাসমান বাজার।   

পেয়ারার ভাসমান বাজার ঝালকাঠির ভিমরুলীর ২০০ বছরের পুরনো ভাসমান বাজারটি এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। পেয়ারার ভাসমান বাজার একটি অনন্য বাজার। বাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক এখানে আসেন। বাংলাদেশের সেরা প্রাকৃতিক নদীর দৃশ্য। এটি এতবেশি সুন্দর যে আপনি না গেলে বুঝবেন না।

৫. কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির

কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির বরিশাল বিভাগের পর্যটন আকর্ষণের ঐতিহাসিক মন্দির। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র চার ৪ কিলোমিটার দূরে কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির অবস্থিত। ভ্রমণকারী যেকোনো যানবাহনে সেখানে যেতে পারেন। কুয়াকাটা বৌদ্ধ মূর্তি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৌদ্ধ মূর্তি। 

একজন পর্যটক যদি বৌদ্ধ মন্দিরে যান, তিনি গৌতম বুদ্ধের মূর্তি দেখতে পাবেন এবং ২০০ বছরের পুরনো কূপও দেখতে পাবেন।

৬. গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন

গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন বরিশাল বিভাগের পর্যটন আকর্ষণের একটি চিরসবুজ ম্যানগ্রোভ বন। কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতি সংরক্ষিত বনের সন্ধান পাওয়া যায়। এটি একটি চিরসবুজ ম্যানগ্রোভ বন। গঙ্গামোতিরে সংরক্ষিত বন্যপ্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হল গঙ্গামোতির লেক। এটি বিভিন্ন ধরণের গাছ এবং বন্যপ্রাণী সহ সুন্দরবনের একটি অতিরিক্ত অংশ।

৭. লেবুর চর

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে লেবুর চর পাওয়া যায়। লেবুর স্থানীয়ভাবে লেম্বুর চর বা 'নেম্বুর চর' নামেও পরিচিত। এই চর বেষ্টিত এলাকা প্রায় ১০০০ একর। কেউড়া, গেওয়া, গোরান, কোরোই, গোলপাতা প্রভৃতি এই চরটিতে বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি রয়েছে। 

লেবুর চর সুন্দরবনের অংশ হলেও এখন এটি সুন্দরবন থেকে বিচ্ছিন্ন। এটি কুয়াকাটার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। তাই পর্যটকরা কুয়াকাটা থেকে লেবুর চর সহজেই যেতে পারেন।

৮. ফাতরার চর বা টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ফাতরার চর নামে পরিচিত। এটি বরিশাল বিভাগের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছে ফাতরার চর একটি চমৎকার পর্যটন স্থান। ফাতরার চর এখন সুন্দরবন বনের একটি বিভাগ। ফাতরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের একটি প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত গাছ। এখন এটি আবার টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নামে পরিচিত।

৯. বিবির পুকুর

বিবির পুকুর বরিশালের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী জলাশয়। বরিশাল জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে বিবির পুকুর অন্যতম। ১৯০৮ সালে, জিন্নাত বিবি মানুষের পানির সমস্যা দূর করতে এই পুকুরটি খনন করেন। সদর রোডের পূর্ব পাশে বিবির পুকুরের দৈর্ঘ্য ১৮৫০ ফুট ও প্রস্থ ৪০০ ফুট। পরবর্তীতে জিন্নাত বিবির পর শতবর্ষী পুকুরটি বিবির পুকুর নামে পরিচিতি পায়।

১০. লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বরিশাল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে লাকুটিয়া গ্রামের লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি দেখতে আপনাকে যেতে হবে। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে রূপচন্দ্র রায়ের পুত্র রাজতন্ত্র রায় ৪০০ বছরের পুরনো লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির ইট-পাটকেল দখল করেন। এখানে রয়েছে দর্শনীয় মঠ, বিশাল দিঘি, মাঠ, খোদাই করা জমিদার বাড়ি।

শোনা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীতেও জমিদার রাজচন্দ্র রায়ের জমিদার বাড়ি এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, কিন্তু আজ তা সবই স্মৃতি।

ধন্যবাদ এতক্ষণ ধরে পড়ার জন্য 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.