আয়মান সাদিকঃ খেলার ময়াদান থেকে শিক্ষকতা

ছোটবেলায় ‘পোকেমন’কার্টুন সিনেমাটি তাঁর খুব প্রিয় ছিল। কার্টুন দেখতেন আর ভাবতেন বাড়ির পাশের ফুটবল মাঠটি হবে তাঁর পোকেমন ব্যাটেল এর জন্য। আর তিনি হবেন সেই ব্যাটেলের পোকেমন মাস্টার। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। পোকেমন মাস্টার হতে চেয়ে হয়ে গেলেন স্কুল মাস্টার তাও আবার অনলাইনে।

দেশের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল বিদ্যালয় 'টেন মিনিট স্কুল ' এর প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক । প্রচণ্ড পরিমাণ ইতিবাচক মানসিকতার আয়মান কোনো কিছুতেই অসন্তুষ্ট নন। বরং সবকিছুতেই ভালো কিছু, পজিটিভ কিছু খোঁজেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।

বর্তমানে টেন মিনিট স্কুল দেশের একমাত্র সাইট যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা রকম টিউটোরিয়ালসের ১ হাজার ৪১১টি ভিডিও রযেছে। যেগুলো ৭০ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।

২৮ হাজার ৪৫৫টি কুইজ ও মডেল টেস্টের মাধ্যমে অনুশীলন, নিজের অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন, সহপাঠি ও অন্যদের সাথে নিজের অবস্থান যাচাইসহ ইন্টারনেটে নেই এমন খুঁটনাটি তথ্যগুলোও সহজে পেয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের লাইভ ফিচার ব্যবহার করে প্রতিদিন লাইভ ক্লাসেরও ব্যবস্থা থাকছে এই স্কুলটিতে।

আয়মান যখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং এ ক্লাস নিতেন তখন দেখতাম দেশের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় এসে কোচিং এ ভর্তি হতো। আর এই সুযোগ লুফে নিয়ে অনেকেই শুরু করেছে কোচিং বাণিজ্য।

শুধুমাত্র ভর্তির আশায় সারাদিন পড়াশোনা করে কোচিং এর পাশেই কোনো একটা মেসে থাকতো তারা। কী দুর্বিষহ জীবনযাপন। তারপরও পরীক্ষায় তেমন ভালো ফলাফল না আসায় ঝরে যাচ্ছে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। এ তো গেলো যারা ঢাকায় আসতে পারে তাদের কথা, কিন্তু আর্থিক ঘাটতি থাকায় যারা আসতে পারে না তাদের কী হবে?

তখনই তাঁর মাথায় ঢোকে কী করে সবার কাছে তাদের প্রশ্ন উত্তর নিয়ে পৌঁছানো যায়, তাও হবে বিনামূল্যে। ব্যস তৈরি করে ফেলল বিনা খরচে পড়ালেখার এক সাইট, যেখানে একটু ভিন্নভাবে, কৌশল আর সৃজনশীলতার মিশেলে শেখানো কঠিন সব প্রশ্নের উত্তর। শেখো, অনুশীলন করো এবং উন্নত হও—এই ট্যাগ লাইন নিয়ে শুরু হয় টেন মিনিট স্কুলের পথচলা।

মানুষ যখন কারো সাথে কথা বলে তখন ১০ মিনিট শব্দটাকে খুব বেশি ব্যবহার করে। ধরুন একটু দাঁড়াও ১০ মিনিটের মধ্যে আসছি, ১০ মিনিটের মধ্যে করে দিচ্ছি, পাঠাচ্ছি ইত্যাদি। সেখান থেকেই আসলে এই ১০মিনিট এর ধারণাটা আসে। যে এমন কিছু যদি করতে পারে যেখানে ১০ মিনিটেই হবে সমাধান, ১০ মিনিটেই পড়াশোনা।

সম্প্রতি আইসিটি ডিভিশন, রবি ও অনলাইন স্কুল- টেন মিনিট স্কুলের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এই বিষয়ে আয়মান বলেন, এই চুক্তির ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য ২ হাজার ১টি ডিজিটাল ল্যাব এবং ৩০ হাজারের বেশি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে টেন মিনিট স্কুলের ডিজিটাল এডুকেশন কন্টেন্ট শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরা হবে।

এছাড়াও আমাদের চলতি বছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী আইসিটি ডিভিশনের ৩ হাজার ডিজিটাল ল্যাবেই আমরা টেন মিনিট স্কুলের কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে চাই

 খুব শিগগিরই একসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) সাথে টেন মিনিট স্কুল  একটি সমঝোতা করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের ৩০ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে টেন মিনিট স্কুল প্রবেশাধিকার পেতে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে এইবছর টেন মিনিট স্কুল ৩৩ হাজার ক্লাসরুম ও ডিজিটাল ল্যাবে আমাদের টেন মিনিটি স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

এছাড়াও তরুণদের স্ব- উদ্যোগী করতে টেন মিনিট স্কুল চালু করেছে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম । যার মাধ্যমে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে। 

উল্লেখ্য,  আয়মান সাদিক কুমিল্লার মুসলিম পরিবারে ২ সেপ্টেম্বর ১৯৯২ জন্ম গ্রহন করেন। । তাঁর পিতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তায়েব বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা এবং তাঁর মাতা শারমিন আক্তার এ একজন গৃহিণী। আয়মান চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এণ্ড কলেজে অধ্যয়ন করেছেন।

তিনি উচ্চমাধ্যমিকে অধ্যয়ন করেছেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এণ্ড কলেজে। আয়মান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.