অনলাইনে ইনকাম করা বর্তমানে একটি বহুল পরিচিত এবং জনপ্রিয় পেশা। আজকাল ছোট থেকে বড় অনেকেই ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করতে চান৷ সঠিকভাবে কাজ করলে অনলাইনের মাধ্যমে মাসে দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা আয় করা যায়৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কিভাবে অনলাইনে আয় করবেন?
অনলাইনে আয় করার বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। সেগুলো হলো:
১. ইউটিউব থেকে আয়
২. ব্লগিং বা ব্লগে আর্টিকেল লিখে আয়
৩. অ্যাডসেন্স থেকে আয়
৪. এফিলিয়েট মার্কেটিং
৫. ই-কমার্সের মাধ্যমে
৬. বিজ্ঞাপন দেখে আয়
নিচে এগুলো বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো-
১. ইউটিউব থেকে আয়:
অনলাইনে ইনকামের কথা উঠলে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে সেটা হলো ইউটিউবিং। ইউটিউব হলো একটি অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম। আর এটি ইন্টারনেট বিশ্বের জনপ্রিয় ১০ ওয়েবসাইটের মধ্যে ইউটিউব হচ্ছে একটি। আপনি এখানে ভিডিও আপলোড করে টাকা আয় করতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে প্রথমে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে।
এরপর আপনি কোন বিষয়ে ভিডিও বানাবেন সেটা ঠিক করতে হবে। আপনার নির্ধারিত বিষয় মোতাবেক আপনার চ্যানেলের নাম করণ করতে হবে৷ এরপর আপনাকে ভিডিও বানিয়ে আপনার চ্যানেলে আপলোড করতে হবে৷ এখন আপনি কিভাবে ভিডিও বানাবেন? ভিডিও বানানোর জন্য আপনার দরকার একটি এডিটিং সফটওয়্যার৷
আপনি আপনার পছন্দমত একটি সফটওয়্যার থেকে ভিডিও এডিট করতে পারেন৷ আর যদি আপনি মোবাইল ব্যবহার করেন, তাহলে যেকোনো একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ ইনস্টল করে নিন৷
আপনি ভিডিও করার কাজে আপনার মোবাইল ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানের মোবাইলগুলোতে খুব ভাল মানের ক্যামেরা রয়েছে। আপনি চাইলে ক্যামেরার সামনে এসে ভিডিও বানাতে পারেন। কিন্তু যদি আপনি চান যে আপনি ফেস (চেহারা) না দেখিয়ে ভিডিও বানাবেন তাহলেও সমস্যা নেই। আপনি স্লাইড শো বা হোয়াইটবোর্ড অ্যানিমেশন ভিডিও-ও বানাতে পারেন।
২. ব্লগিং বা ব্লগে আর্টিকেল লিখে আয়:
ব্লগিং হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে লেখালেখি করা৷ আজকাল ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে চাকুরিজীবি মানুষেরা অনলাইনে পার্টটাইম ব্লগিং করে টাকা আয় করছেন। কেউ করছেন তার মাসিক খরচ চালাতে, আবার কেউবা করছেন বাড়তি আয়ের উদ্দেশ্যে।
তবে উদ্দেশ্যই হোক না কেন, আমার মনে হয় অনলাইনের মাধ্যমে টাকা আয় করার জন্য এটি খুবই সহজ এবং ভালো একটি উপায়। চাইলে আপনিও এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্লগিং কিভাবে করবেন? ব্লগিং করার জন্য আপনার দরকার একটি কম্পিউটার বা একটি লেপটপ। যদি আপনার কাছে তা না থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। আপনি আপনার মোবাইল দিয়েই ব্লগিং করতে পারবেন। প্রথমেই আপনাকে একটি ওয়েবসাইট খুলতে হবে। এর জন্য আপনি গুগল ব্লগস্পট (Google Blogspot) কিংবা গুগল সাইট (Google Site) ব্যবহার করতে পারেন।
ওয়েবসাইট খোলার পর আপনাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি কি বিষয়ে লিখবেন সেটা ঠিক করতে হবে। যেমন আপনি যদি খেলাধুলা সম্পর্কে ভালো জেনে থাকেন, তাহলে এই বিষয়ে লিখতে পারেন। আবার যদি সাহিত্য সম্পর্কে আপনার ভালো জ্ঞান থাকে, তাহলে সাহিত্য নিয়ে লিখতে পারেন। এভাবে আপনি একটি বিষয় নির্ধারণ করবেন। এরপর আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো সবচেয়ে দরকারি কাজ। আর সেটা হলো লেখা৷ আপনার নির্ধারিত বিষয় নিয়ে আপনাকে লিখতে হবে।
আপনি চাইলে ইন্টারনেট থেকেও কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। তবে আপনাকে এটা খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার দেয়া তথ্যগুলো যেন ভুল না হয়৷ এরপর সেসব তথ্যগুলো ব্যবহার করে একটা আর্টিকেল লিখবেন। এরপর সেটা আপনার ওয়েবসাইটে দিয়ে দিবেন। আবার নিজের ওয়েবসাইট না বানিয়ে আপনি যেকোনো ব্লগে আর্টিকেল লিখেও টাকা ইনকাম করতে পারেন। এভাবে আপনি ব্লগিং করে টাকা ইনকাম করতে পারেন।
৩. অ্যাডসেন্স থেকে আয়:
অ্যাডসেন্স হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনের প্রোগ্রাম৷ এটি গুগল কর্তৃপক্ষ সয়ং নিজে পরিচালনা করছে। আপনি যদি একজন ভাল ব্লগার কিংবা ইউটিউবার হন এবং আপনার ব্লগে বা ইউটিউব চ্যানেলে প্রচুর ভিজিটর থাকে, তাহলে আপনি এই অ্যাডসেন্স থেকে হাজার হাজার টাকা আয় করতে পারেন।
এই পদ্ধতিতে আপনার ইউটিউব ভিডিওতে বা ব্লগে অ্যাডসেন্স এর বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতি ক্লিকে ডলার আয় করতে পারবেন। তবে এই পদ্ধতিতে টাকা ইনকাম করার জন্য আপনার ব্লগিং কনটেন্ট বা ইউটিউব ভিডিও ভালোমানের এবং ইউনিক হতে হবে। তাহলেই আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভড হবে এবং আপনি টাকা ইনকাম করতে পারবেন৷
৪. এফিলিয়েট মার্কেটিং:
এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো অনলাইনে ইনকামের আরেকটি মাধ্যম। এর জনপ্রিয়য়া অনেক বেশি। কারণ এর মাধ্যমে মানুষ লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারেন। বিভিন্ন ব্লগার কিংবা ইউটিউবাররা এই পদ্ধতির মাধ্যমেই আয় করেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং-এ আপনাকে একটি কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আপনার ব্লগিং বা ইউটিউব প্লাটফর্মে প্রচার করতে হবে।
আপনার এই প্রচার বা মার্কেটিং থেকে যদি কেউ সেই কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিসটি কিনে নেয় তাহলে কোম্পানির পক্ষ থেকে কমিশন দেওয়া হবে। যতটুকু কমিশন দেওয়া হবে তা নির্ভর করে প্রোডাক্ট এবং সেটির ক্যাটাগরির উপর। ইন্টারনেটে এরকম হাজার হাজার রকমের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম চালু করেছে।
তবে এফিলিয়েট মার্কেটিং-এর জন্য আপনার ইউটিউব প্লাটফর্মে বা ব্লগে প্রচুর ভিজিটর থাকতে হবে। তাহলেই আপনি এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভালোভাবে টাকা ইনকাম করতে পারেন।
৫. ই-কমার্সের মাধ্যমে:
ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য একটি বাণিজ্য ক্ষেত্র যেখানে কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেম (ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওইয়ার্ক) এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়/ বিক্রয় হয়ে থাকে। টেকনোলজি উন্নতি সাধনের সাথে সাথে মানুষ দিন দিন খুব অনলাইন কেনা কাটার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে।
তাই ই-কমার্সে প্রচুর ব্যবসা সফল হচ্ছে। ই-কমার্সের মাধ্যমে এখন মানুষ প্রচুর টাকা ঘরে বসেই ইনকাম করছেন। আপনিও চাইলে একটি ই-কমার্স সাইট শুরু করতে পারেন। আপনি একা বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে দলগত ভাবেও এটি করতে পারেন। ই-কমার্সে সফলতা পেতে হলে প্রথমে সেসব পণ্য দিয়ে শুরু করুন যেগুলো সচরাচর পাওয়া যায় না।
তুলনামূলক কম দামে এই ধরনের পণ্য বিক্রি করে আপনি সহজেই আপনার ব্যবসা এগিয়ে নিতে পারবেন। তবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার বিক্রি করা পণ্যের মান যেন ভালো হয়। তা নাহলে মানুষ সেগুলো কিনতে চাইবে না। তাই আপনার পণ্যগুলো ভালো মানের হওয়া খুব জরুরি।
৬. বিজ্ঞাপন দেখে আয় :
অনলাইনে আয় করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে বিজ্ঞাপন দেখে আয়। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন৷ বিজ্ঞাপন দেখেও আয় করা সম্ভব। বর্তমানে ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপনের অভাব নেই। তাই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করা যে কিরকম সহজ৷ তা হয়তো বুঝতেই পারছেন।
বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন ইন্টারনেটে দেয় এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট সেগুলো মানুষকে দেখায়। প্রতি ভিউতে টাকা জমা হয়। এরপর সেই ওয়েবসাইট তাদের লাভ্যংশ থেকে যারা বিজ্ঞাপন দেখেছে তাদের কিছু টাকা দেয়। আপনি এসপিসি বা রিং আইডি থেকে বিজ্ঞাপন দেখে ঘরে বসেই সহজেই ভালো পরিমানে টাকা ইনকাম করতে পারেন৷
উপরের সব লেখা পড়ে হয়তো ইন্টারনেট থেকে আয়ের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কিন্তু এই উপায়গুলোকে কিভাবে ব্যবহার করবেন সেটা হয়তো ভালো করে বুঝতে পারেননি। আসলে আমার এই পোস্টটি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো আপনাকে অনলাইনে আয় করার উপায়গুলো সম্পর্কে অবগত করা। তাই আশা করছি আপনি এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন।
আশা করি উপকৃত হবো
You must be logged in to post a comment.